আশুলিয়ায় র্যাবের গাড়ি ভাঙচুর, আহত ৩০
ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে চলমান শ্রমিক অস্থিরতায় শ্রমিক কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার বেঙ্গল গ্রুপের ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় র্যাবের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টাসহ সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে একটি তৈরি পোশাক কারখানায়।
পরদিন সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে র্যাব-৪ (সিপিসি-২) নবীনগর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বকেয়া বেতনসহ ১৬ দফা দাবিতে গতকাল সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করে আশুলিয়ার শিমুলতলার ইউফুরিয়া গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। বিকেলের দিকে স্টাফদের সঙ্গে শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। তার জেরে একপর্যায়ে রাতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কারখানাটিতে ভাঙচুর শুরু করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কারখানা এলাকায় গেলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৩০ আহত হয়েছেন।
ইউফোরিয়া গার্মেন্টসের একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত কয়েক দিন ধরে টিফিন বিল ও রাত্রিকালীন অতিরিক্ত ডিউটির টাকা বৃদ্ধি, ছুটি বাড়ানোসহ নানা দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। গত পরশুদিন মিটিংয়ের সময় এক সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে মারধর করে আহত করে কারখানার স্টাফরা। এছাড়া প্রতি মাসের ৭ তারিখ বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তা করছে না মালিকপক্ষ।
তারা বলেন, এসব দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন করছিলেন শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধ করলে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আর সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মালিকপক্ষ দাবি না মানায় শ্রমিকরা ভেতরেই অবস্থান করছিলেন।
তারা আরও বলেন, এসময় সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। এতে আমাদের অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। পরে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
র্যাব-৪ সিপিসি ২ সাভার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, আমরা এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে তাদের (শ্রমিক) বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বিকেলের দিকে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। তখন গার্মেন্টস থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করি। পরবর্তীতে তারা উত্তেজিত হয়। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সমর্থ হই।
তিনি বলেন, গার্মেন্টসে যারা দুষ্কৃতকারী ছিল তারা র্যাবের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা আগুনটা নেভাতে সমর্থ হই। এসময় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন, তবে এটা মেজর না।
এ র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজকতার সৃষ্টিকারীদের শনাক্তে আমাদের ছায়াতদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছি, কারা এর পেছনে মদতদাতা এবং গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেব। গার্মেন্টস সেক্টরকে সচল রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।