ধর্ম

ইসলামে বৃষ্টির নামাজ পড়ার বিধান

যেকোনো সংকটে তাওবা-ইস্তিগফারের নির্দেশ দেয় ইসলাম। যেমন অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির সংকট মুহূর্তে কোরআন-হাদিসে আল্লাহর বাধ্যতা ও তাওবা-ইস্তিগফারের হুকুম দেওয়া হয়েছে।

বৃষ্টি চাওয়ার মূল করণীয় হলো তাওবা-ইস্তিগফার

কোরআনে কারিমে এসেছে- ‘ তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। ’ (সুরা : নূহ, আয়াত : ১০ ও ১১)

এতে প্রমাণিত হয় যে অনাবৃষ্টির সংকটে মূল করণীয় হলো গুনাহ ছেড়ে তাওবা-ইস্তিগফারের দিকে মনোনিবেশ করা। বৃষ্টি প্রার্থনায় তাওবা-ইস্তিগফারের বিভিন্ন রূপ রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) থেকে প্রমাণিত।

যেমন—সাধারণভাবে দোয়া ও ইস্তিগফারে রত থাকা, জুমার খুতবায় খতিব সাহেবের বৃষ্টির জন্য দোয়া করা, একাকী নামাজ পড়ে দোয়া করা এবং জামাতবদ্ধভাবে ‘ইসতিসকা’র নামাজ পড়ে দোয়া করা ইত্যাদি।

‘ইসতিসকা’ কী ও কীভাবে করতে হয়

‘ইসতিসকা’ শব্দের অর্থ হলো—পানি চাওয়া ও বৃষ্টি প্রার্থনা করা, চাই তা স্বাভাবিক একাকী দোয়ার মাধ্যমে হোক, জুমার খুতবায় করা হোক বা জামাতবদ্ধ ইস্তিসকার নামাজ পড়ে করা হোক। তাই ফোকাহায়ে কেরাম মানুষের সুবিধা অনুসারে যেকোনো পদ্ধতি গ্রহণের মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেননা এগুলো দ্বারাই ইসতিসকার মৌলিক উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।

সহজ হলে সব পদ্ধতিতেই বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে থাকবে।

ইসতিসকার নামাজ বিভিন্ন হাদিসে একাধিক সাহাবির বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে মাঠের দিকে বের হলেন। অতঃপর জামাতবদ্ধভাবে জোরে কিরাতের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ পড়লেন ও চাদর ফিরালেন এবং দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে হাত উঁচু করে দোয়া করলেন।
(দেখুন : বোখারি : হাদিস ১০১২, ১০২৫, ৬৩৪৩)

‘ইসতিসকা’র নামাজের নিয়ম ও আদবসমূহ

ইসতিসকার নামাজের নিয়ম হলো—নির্দিষ্ট দিনে এলাকার মুসলিমরা খোলা মাঠে একত্র হবে। তারপর ঈদের নামাজের ন্যায় আজান-ইকামত ব্যাতীত জোরে কিরাতের সঙ্গে জামাতে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। তবে এতে ঈদের নামাজের ন্যায় অতিরিক্ত তাকবির নেই। নামাজের পরে ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে দুটি খুতবা প্রদান করবেন। খুতবার শেষের দিকে ইমাম সাহেব গায়ের চাদর উল্টিয়ে বা আবা ইত্যাদি ফিরিয়ে নেবেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে দুই হাত উঁচু করে দীর্ঘক্ষণ দোয়া করবেন। মুসল্লিরাও দোয়ায় ইমামের অনুসরণ করবে। এভাবে লাগাতার তিন দিন করবে।

আর ইসতিসকার নামাজের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত আদবগুলোর প্রতি লক্ষ রাখা উত্তম :

১. নিজের ওপর কারো পাওনা হক থাকলে তা করে বা তার সন্তুষ্টচিত্তে মাফ করিয়ে আসবে।

২. নামাজের জন্য বের হওয়ার আগে তিন দিন লাগাতার রোজা রাখবে।

৩. বের হওয়ার আগে সদকা করবে।

৪. মাঠে পায়ে হেঁটে আসবে।

৫. কোনো নেককার মানুষের মাধ্যমে দোয়া করাবে। হজরত ওমর (রা.) তাঁর খিলাফত আমলে হজরত আব্বাস (রা.)-এর মাধ্যমে দোয়া করিয়েছিলেন। (দেখুন : বোখারি : হাদিস ১০১০, ফয়জুল বারী ২/৪৯৭)

৬. আল্লাহর রহমত প্রত্যাশায় শিশুদেরও আনবে। সহজ হলে গৃহপালিত পশুও সঙ্গে আনবে। কেননা দুর্বলদের ও অবোধ জন্তুদের অসিলায় আল্লাহ তায়ালা সবাইকে রহম করার বিষয়টি বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। একটি হাদিসে এসেছে—জনৈক নবী (আ.) উম্মতকে নিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনায় বের হয়ে দেখলেন, একটি পিঁপড়া পা উঁচু করে প্রার্থনা করছে। ফলে তিনি সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন : ফিরে চলো, এই পিঁপড়ার দোয়ার অসিলায় তোমাদের জন্য দোয়া কবুল হয়ে গিয়েছে। (শরহু মুশকিলিল আসার : হাদিস ৮৭৫)

৭. পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও অতি সাধারণ পোশাকে বিনয়বেশে অবনত মস্তকে আসবে। (দেখুন : রদ্দুল মুহতার ২/১৮৪-১৮৫)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d