‘এখনও মোশতাকের মতো শকুনিরা আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে আছে’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল রাজনৈতিক পরিবার, একটি মহীরুহ, এই মহীরুহের অনেক ডাল-পালার মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত জননেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আতাউর রহমান খানের মত বলিষ্ঠ কিছু মানুষ। আবার এই ডাল-পালায় খোন্দকার মোশতাকের মত কিছু শকুনিরাও বাসা বেঁধেছিল। এজন্য আওয়ামী লীগকে মাশুল দিতে হয়েছে। এখনও মোশতাকের মতো শকুনিরা আওয়ামী লীগের ঢালপালায় ঘাপটি মেরে আছে। তারা যে কোন সময় বিপদ-আপদের হেতু হয়ে উঠতে পারে। তাই তাদের কাছ থেকে সাবধান।
সোমবার সকালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক কূটনীতিক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম জননেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্মরণসভায় মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের তনয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেছেন, আমি সন্তান হিসেবে আমার পিতা মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের কাছ থেকে সাধারণ জীবনযাপনের দীক্ষা পেয়েছি এবং লোভ ও লালসামুক্ত হয়ে শুদ্ধ জীবনযাপনের দীক্ষা অর্জন করতে পেরেছি। আজকের রাজনীতিকদের এমনটাই হওয়া উচিত।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, আতাউর রহমান খান কায়সার আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে অভিভাবকের ভূমিকায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি দলের অভ্যন্তরীণ মত ভিন্নতা নিরসনে একজন অন্যতম অনুঘটক ছিলেন। আজকের দিনে তাঁর মত রাজনীতিকের শূন্যতা রয়েছে। এই শূন্যতা পূরণ না হলে কোন সংকটই উত্তরণ করা সম্ভব নয়।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, মুসলিম লীগ পরিবারের সন্তান আতাউর রহমান খান কায়সারকে বঙ্গবন্ধু দলে টেনে এনে ভুল করেননি। কারণ জহুরে জহর চেনে। আতাউর রহমান খান কায়সার আমৃত্যু আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীকের সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। রাজনীতিক হিসেবে তাঁর চাওয়া-পাওয়ার কিছুই ছিল না। তাঁর কাছে রাজনীতি ছিল শুধু দেয়ার জন্য।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবদুস সালাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করেননি। তিনি সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। ঠিক একইভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যে উন্নয়নগুলো করেছেন সেগুলো শুধু আওয়ামী লীগের জন্য করেননি সবার জন্য করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার বনেদী ঘরের সন্তান হিসেবে নম্র, ভদ্র, শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি শুধু রাজনীতিক নন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন। এই শান্ত মানুষটি দলের কঠিন সময়ে সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। ১/১১ এর সময় যখন আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা চুপসে গিয়েছিলেন তখন একমাত্র প্রয়াত জিল্লুর রহমান, আজকের প্রধান অতিথি বেগম মতিয়া চৌধুরীর সাথে আমাদের বীর সন্তান আতাউর রহমান খান কায়সার সাহসী ভূমিকা পালন করে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই ১/১১ এর খলনায়করা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে পারেননি। এটাই আমাদের গর্ব ও অহংকার।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কঠিন সময়ের রাজনীতিক হিসেবে যখন আমরা জেল, জুলুমসহ নানাভাবে নিপীড়িত ও নির্যাতিত তখন আতাউর রহমান খান কায়সার আমাদের খোঁজ-খবর রাখতেন। আমাদেরকে সাহস যোগাতেন। এমনকি নানাভাবে নানা কৌশলে আমাদের সুরক্ষা দিয়েছিলেন। এমন একজন রাজনীতিক শেখ হাসিনার দুঃসময়ে পরম ভরসার স্থল ছিলেন। তিনি আমাদের আজকের রাজনীতিকদের জন্য একজন আদর্শিক গুরু।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, এস.এম. আবুল কালাম, অধ্যাপক মো. মঈনুদ্দিন, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলার মুজিবুল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের আলহাজ বদিউল আলম, দক্ষিণ জেলার মোছলেহ উদ্দিন মনসুর, উত্তর জেলার দেবাশীষ পালিত, মহানগর আওয়ামী লীগের আলহাজ শফর আলী, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম ফারুক, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের দিলোয়ারা ইউসুফ, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের শামিমা হারুন লুবনা।
সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এড. সুনীল কুমার সরকার, এ.কে.এম বেলায়েত হোসেন, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, ইঞ্জি: মানস রক্ষিত, আবুল কালাম, এড. ফখরুদ্দিন চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন মাহমুদ এমরান, আবছার উদ্দিন সেলিম প্রমুখ।
এর আগে সকালে মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর কবরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, উপদেষ্টা আলহাজ শফর আলী, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুক, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর বন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ হোসেন, নির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, থানা আওয়ামী লীগের সাহাবউদ্দিন আহমেদ, রেজাউল করিম কায়সার প্রমুখ।