কক্ষে রক্তের দাগ, এমপি আজিমের লাশ কোথায়?
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউটাউনের সঙ্গে সঞ্জীবা গার্ডেন নামে একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার। যদিও তার মরদেহ পাওয়া নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতার নিউ টাউনে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। বুধবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভারতীয় পুলিশ আমাদের জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন। এটা সুনিশ্চিত। কারা খুন করেছে? এই খুনের মোটিভ কী? এগুলো খুঁজে বের করতে ভারতীয় পুলিশ কাজ করছে। বাংলাদেশের পুলিশও কাজ করছে। এ বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
অন্যদিকে বুধবার (২২ মে) বিকেলে নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস থেকে বেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইজি সিআইডি অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, এখন পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়নি। আমরা কেসের তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে, তাতে ১৩ তারিখে তিনি এই ভবনে ঢুকেছিলেন। তবে এর আগে এসেছিলেন কি না সেটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। যদিও বিষয়টি এখনো তদন্তসাপেক্ষ।
ভারতীয় ইংরেজি সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার যে ফ্লাটে এমপি আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে, সেখানে তার মরদেহ পাওয়া যায়নি। তবে যে অ্যাপার্টমেন্টে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল, সেখানে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে।
কলকাতা পুলিশের ধারণা, দুই দেশের দুষ্কৃতকারীরা ঘটনায় জড়িত। ওই আবাসনের ৫৬ নং রুমে তাকে হত্যার পর টুকরো করা হয়েছে এবং সেখান থেকে মরদেহের টুকরো কোথাও ‘গায়েব করে ফেলেছে’ দুষ্কৃতকারীরা। পুলিশ নিশ্চিত যে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ভারতীয় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী আনোয়ারুল আজিম খুনের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের মধ্য থেকে ৩ অপরাধীকে আমাদের পুলিশ ধরেছে। আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঝিনাইদহ একটি সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা। আমাদের আনোয়ারুল আজিম এবারও সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যাওয়ার পরই ঘটনাটি ঘটে। শিগগিরই খুনের মোটিভ খুঁজে বের করা হবে। ভারতীয় পুলিশ আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে।
মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মরদেহ এখনও আমাদের কাছে আসেনি বা পৌঁছায়নি। আমরা আরও কিছু তথ্য পেয়েছি। সেগুলো এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন আর কিছু বলব না। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আনোয়ারুল সাহেব কোথায় খুন হয়েছেন? কে কে খুন করেছে? কোন অস্ত্র দিয়ে খুন হয়েছেন? সব কিছুই তদন্ত শেষ হলে পরে জানানো হবে। এই ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশের পুলিশ তদন্ত করছে।
সংসদ সদস্যের হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে তারা কোথায়? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সন্দেহভাজন আটক তিনজন আমাদের পুলিশের হেফাজতে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা সুনিশ্চিত, যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল। তবে তা এখনই আমরা প্রকাশ করতে পারবো না।
এই হত্যাকাণ্ডের কারণে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে ছেদ পড়বে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। সম্পর্কের ফাটল ধরবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারণ, আনোয়ারুল আজিম হত্যার ঘটনায় ভারতের কেউ জড়িত হননি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে- আমাদের দেশের মানুষই তাকে হত্যা করেছে।