কর্ণফুলীতে ব্যবসায়ীকে অপহরণ, জাহাজের মাস্টার গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে একজন ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে অপহরণের অভিযোগে একটি লাইটার জাহাজের মাস্টার মো. আকতার জামান (৩১) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার জামান এমভি আল ওয়াকিয়া লাইটার জাহাজের মাস্টার বলে জানা যায়।
শুক্রবার (৩ মে) রাত ৮টার দিকে কর্ণফুলীর চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের (৭নং ওয়ার্ড) মৌলভী বাজার এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে খোয়াজনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন।
এ ঘটনায় বন্দর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার অপহৃত ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান (৬৮) কর্ণফুলী থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। অপহৃত শাহাজাহান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সদরঘাট বাংলাবাজার এলাকার এস.আর ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং চট্টগ্রাম লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন। মামলায় আসামিরা হলেন-কর্ণফুলী উপজেলার খোয়াজনগর এলাকার নুরুল আলমের ছেলে আক্তার জামান (৩১), একই এলাকার মৃত আব্দুস সবুরের ছেলে নুর ইসলাম (৪০), চরলক্ষ্যা মৌলভী পাড়ার মোঃ গফুর (৩৩), চরলক্ষ্যা এলাকার জুংগার ছেলে শাকিব (২৭) ও খোয়াজনগর এলাকার বদির ছেলে মো. আসিফ (২২)। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা রয়েছে আরো ৭-৮ জন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে কর্ণফুলীর চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের পোর্টের রাস্তায় ভিকটিম তাঁর নিজস্ব খামারবাড়ি দেখতে যান। সন্ধ্যার দিকে কাজ সেরে খামারবাড়ি থেকে সিএনজি টেক্সি যোগে বাংলাবাজার ঘাটে যাওয়ার পথে মৌলভী বাজার এলাকার আইয়ুবশাহ বাড়ীর সামনে পৌঁছলে হঠাৎ আকতার জামান (৩১) এর নেতৃত্বে একদল লোক ২-৩ টি সিএনজি টেক্সি করে এসে ভিকটিম শাহজাহানের পথরোধ করেন।
পরে চড় থাপ্পড় দিয়ে সিএনজিসহ জোরপূর্বক খোয়াজনগর এলাকায় নিয়ে আসেন। একটি বাগির পিছনে আটক রাখেন। এ সময় ছুরির ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। পরে রাত ৮ টার দিকে খবর পেয়ে কর্ণফুলী থানার পুলিশ এসে ভিকটিমকে উদ্ধার করেন।
অন্যান্য লোকজন পালিয়ে গেলেও আকতার জামানকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এমনটাই জানালেন কর্ণফুলী থানার এসআই মো. সেকান্দর মিয়া।
তবে অপহরণের ঘটনার অনুসন্ধানে উঠে আসে আরেক কাহিনী। এতে জানা যায়, গ্রেপ্তার আসামি আকতার জামান কর্মরত ওয়াকিয়া লাইটার জাহাজটি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে গম বোঝাই করে নারায়নগঞ্জের ডেমরায় যান। সেখানে সিরিয়াল মেইনটেইন করার কারণে আনলোড করতে দেরি হয়। জাহাজের মালিক জাহেদ আমিন দোভাষ ভিকটিম শাহাজাহানের পূর্ব পরিচিত ছিল।
সে সুবাধে মোবাইল ফোনে তিনি শাহাজাহানকে জানান, তার জাহাজটি নারায়নগঞ্জে প্রায় ৪ মাস যাবত গম খালাস না করে নোঙর অবস্থায় রয়েছে। এক পর্যায়ে গম আনলোড হলেও জাহাজ ফিরে না আসায় গত ৪ এপ্রিল জাহাজের মালিকসহ ভিকটিম নারায়নগঞ্জে যান।
তখনই গ্রেপ্তার জাহাজের মাস্টার আকতার জামান জানায়, জাহাজের মালিক তাঁদের ২ মাসের বেতন বোনাস দিচ্ছে না। তাই জাহাজ চট্টগ্রাম যাচ্ছে না। পরে নারায়নগঞ্জ নৌ পুলিশ, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়ে চট্টগ্রামে আসে। এ সময় জাহাজ মাস্টার ও জাহাজের ৯ জন শ্রমিক কোম্পানির নিকট হতে ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৭০০ টাকা বেতন বোনাস বুঝে নেন।
পরে জাহাজ মাস্টার জামান আরো টাকা পাবে বলে দাবি করে সে সময়ের মধ্যস্থকারী ভিকটিম শাহাজাহানের সদরঘাট অফিসে যান। এ সময় ভিটকিম জামানকে টাকা পেলে চট্টগ্রাম লাইটারেজ সমিতির মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়ার কথা জানান। তবুও আকতার জামান ক্ষিপ্ত হয়ে কর্ণফুলীতে এসে অপহরণ ও আটকের ঘটনাটি ঘটান।