কাউন্সিলর হয়েও পান বিক্রি করে সংসার চালান নূর আলম
নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নয় জনগণের সেবা করার জন্যই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর আলম। নিজে কিছু না করলে জনগণের নিকট অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। আর সেকারণেই জনপ্রতিনিধি হয়েও খিলিপান বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। সততার সঙ্গে জনসেবা করতে পেরে সন্তুষ্ট তিনি। সেই সঙ্গে এমন জনপ্রতিনিধি পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ।
দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নূরে আলম। বিরামপুর পৌরশহরের ঢাকামোড়ের পার্শ্বে অগ্রণী ব্যাংকের নিচে একটি ছোট্ট খিলিপানের দোকান তার। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি ওই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। পান বিক্রির সেই আয় দিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে পান বিক্রির সুবাদে স্থানীয়দের সঙ্গে তার বেশ সখ্যতা তৈরি হয়। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছিলেন। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ভোটে পাঞ্জাবি প্রতীক নিয়ে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন।
স্থানীয় এলাকাবাসী সাইদুল ইসলাম বলেন, নূর আলম ভাই অনেক ছোটবেলা থেকেই বিরামপুরে পানের দোকান করেই চলছেন। ওই আয় দিয়ে সে তার সংসার চালায় ও ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালান। এরপর জনগণের দাবিতেই তিনি ভোটে দাঁড়ান। প্রথমবারই সে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এখনো সেই পানের দোকান চালিয়ে যাচ্ছেন পাশাপাশি কাউন্সিলরের যে কাজ সেটিও করছেন। দোকানে বসেই মানুষের যে চাহিদা বা কারো কোনো সমস্যা সেটি মিটিয়ে দেন। কখনোই তিনি মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। কেউ যে তাকে জোরে কথা বলবে এমনটিও ঘটেনি বরং আমরাই তাকে জোর করে নিয়ে যায়।
রিকশাচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলর নূর আলম ভাইকে সবসময় আমাদের সুখে-দুঃখে কাছে পায়। উনি তার খিলিপানের দোকানের যে পুরাতন ব্যবসা সেটি ধরে রেখেছেন। পাশাপাশি সে তার এলাকার মানুষের সেবা করছেন। সকলকে এই দোকানের ঠিকানা দেয়া রয়েছে। আমাদের যেকোনো কাজে তার প্রয়োজন হলে ওই পানের দোকানে আসলেই তাকে আমরা পায়। শুধু তাই নয় যেকোনো প্রয়োজনে যখন যেভাবে তাকে ডাকা হয় সে আমাদের ডাকে হাজির হন। সেই সঙ্গে সব কাজে আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে উনি খুব ভালো মানুষ। যার কারণে আমরা যেমন তাকে ভালোবাসি, তেমনি তিনিও আমাদের সকলকে ভালোবাসেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী মোরশেদ মানিক বলেন, বিরামপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর আলম পেশায় একজন পান দোকানী। বিরামপুরের ঢাকা মোড়ে অগ্রণী ব্যাংকের নিচে ছোট্ট একটি খিলিপানের দোকান রয়েছে তার। ওই পানের দোকান করতে করতেই তার অগ্রসর হওয়া শুরু হয়েছে। প্রথমে সে কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর সে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। উনি সাধারণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন এমনকি যারা গরীব মানুষ রয়েছেন, যাদের কার্ড রয়েছে কিন্তু ১৫ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের সেই টাকা নেই তাদের সহযোগিতা করে থাকেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী সিদ্দিক হোসেন বলেন, উনি প্রথমে বিরামপুরে এসে একটি কাপড়ের দোকানে সেলস ম্যানের চাকরি নেয়। দীর্ঘদিন ধরে সেই চাকরি করার পর সে ব্যাংকের নিচে এসে ছোট্ট একটি খিলিপানের দোকান দিয়ে বসেন। এর মাঝেই সে পৌরসদরের বিভিন্ন কাপড় দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়ে সংগঠন করেন যার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এরপর সকল শ্রমিকরা তাকে ধরে যে আপনি সবসময় আমাদের পাশে থাকেন তাই এবার আপনি কাউন্সিলর নির্বাচন করেন আমরা আছি আপনার সঙ্গে। সকলের সহযোগিতায় তিনি নির্বাচন করলেন, এমনকি নির্বাচিত হয়ে গেলেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী শফিকুল ইসলাম বলেন, নূর আলম ভাই আর আমি একসঙ্গেই বিরামপুরের যমুনা ক্লথ স্টোর নামক কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতাম। কিছুদিন চাকরি করার পর সে ভাবতে থাকে ছোট খাটো কিছু একটা করার। সেই ভাবনার মাঝে অল্প টাকায় কি আর করবে খিলিপানের দোকান শুরু করে। পানের দোকান করতে করতে অনেক মানুষের সঙ্গে তার আন্তরিকতা হয়ে গেলো। এরপর সে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে বাড়ি করলো। যেহেতু মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে তাই বাড়ি করার পর মনে করলেন যে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হতে পারবেন। সেই চিন্তা থেকেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন করলে একচান্সেই নির্বাচিত হন।
স্থানীয় এলাকাবাসী মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি তার পানের দোকানে প্রায় পনেরো বছর ধরে পান খায়। তিনি খুব সুন্দরভাবে পান বানান সুন্দরভাবে পান দেন ও পানের স্বাদ বেশ ভালো লাগে। যার কারণে এই এলাকায় তার পানের বেশ সুনাম রয়েছে। শুধু তাই নয় তিনি আমাদের পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি বেশ জনপ্রিয় একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এলাকার জনগণের সঙ্গে তার বেশ ভালো সুসম্পর্ক রয়েছে।
কাউন্সিলর নূর আলম বলেন, আমি বিগত পনেরো বছর ধরে খিলিপানের দোকান করি। এই পানের দোকান করতে করতে বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে আমার বাড়ি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে সেখানকার মানুষের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আমার শ্বশুরবাড়ি ওই একই ওয়ার্ডে। সেই ওয়ার্ডে আমার শ্বশুর কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি ছেড়ে দেয়ার পর এলাকার মানুষ আমাকে চেয়ে নিলো। তখন আমি এই পানের ব্যবসা করাকালীন অবস্থায় মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করতে করতে ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করি। সেই নির্বাচনে পাঞ্জাবি প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করি। আমার ওয়ার্ডের যে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষকে সেবা দেয়ার পাশাপাশি আমি এই খিলিপানের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমার ওয়ার্ডের যে কোনো সমস্যা যে কোনো সুবিধা অসুবিধা আমি দ্রুত সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। উদ্দেশ্য একটাই আমি একজন গরীব মানুষ সে কারণে গরীব মানুষের সঙ্গে থাকবো তাদের পাশে দাঁড়াব। আশা করি এই মানুষের ভালোবাসা পেলেই আমার সার্থকতা। এতটুকুই এই গরীব মানুষকে নিয়েই আমার চলাফেরা। তারা দোয়া করলেই আমি ভবিষ্যতে আরও কামিয়াবি হতে পারবো বলে আশা করি উদ্দেশ্য এতটুকুই।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি এই জন্যই যদি আমি ব্যবসা পরিচালনা না করতাম সেক্ষেত্রে জনগণের প্রতি আমার উদ্দেশ্য খারাপ হবে। তাদের কাছ থেকে পয়সা নেয়ার উপলব্ধি আসবে, যার কারণেই আমি এসব ত্যাগ করে আমার হালাল ব্যবসা পরিচালনা করছি। এর পাশাপাশি আমার যে দায়িত্ব ২নং ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আর আমার এতটুকুই সার্থকতা মানুষ যত রাগ করেই আসুক না কেন সেই মানুষ আমার দোকানে যখন আসে তাকে সালাম দিয়ে বসতে বলে একটি খিলি পান খাওয়ালেই তাদের সব রাগ পানি হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তাকেই আমি ইজি করতে পারি সমস্যা সমাধান করতেও সহজ হয়ে যায়। আপনারা সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন আমার ওয়ার্ডের মানুষজন যেন এভাবেই আমার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে যায়। আমি তাদের কাছ থেকে আর অন্য কিছু চাই না। ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি যদি ২নং ওয়ার্ড পরিচালনা করলে আমার ব্যবসার কিছুটা ক্ষতি হবে এটা আমি মেনেই নিয়েছি। সেই সঙ্গে এটাতেই আমার বেশি ভালো লাগে যে আমার ব্যবসার পাশাপাশি কিছু মানুষকে সহযোগিতা করতে পারছি।
বিরামপুর পৌরসভার মেয়র আককাস আলী বলেন, নূর আলম পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গত ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হন। তার সঙ্গে আমার পূর্ব থেকেই পরিচিতি ছিল। সে একটি পরিশ্রমী ছেলে পানের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এর পাশাপাশি সে প্রতিটি মানুষের কাছেই যেত, কারো যদি কোনো বিপদ হতো তার পাশে দাঁড়াত সে। আমি ভাবতেই পারিনি সে আবার কাউন্সিলর নির্বাচন করবে। শেষ পর্যন্ত সে নির্বাচন করলো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ও সেবার কারণে তাকে বিপুল ভোটে এলাকার জনগণ নির্বাচিত করে। এখন পর্যন্ত সে অত্যন্ত সুনাম দক্ষতা ও সততার সহিত ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছে। আমি খেয়াল করেছি সে সবসময় একটিভ ও পরিশ্রমী তাকে যখন যেভাবে আমি চেয়েছি বা এলাকার জনগণ চেয়েছে তাৎক্ষনিক সে তাদের ডাকে সাড়া দেয়। আমি তার উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। আমার বিশ্বাস সে আগামী দিনে আরও ভালো করবে, মানুষের সেবার ক্ষেত্রে সে আরও ভালো ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্বাস করি।