কাল বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ, জনমনে আতঙ্ক!
আগামীকাল ২৮ অক্টোবর দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে নেমে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি বেশ কয়েকটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত। সরকার উৎখাতে তার অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক এ আহ্বানে জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ বিরোধী ও মানবাধিকার কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা এ আহ্বানকে সংখ্যালঘু এবং উদারপন্থি শক্তির বিরুদ্ধে নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক জনসভায় জনগণকে রাজপথে নেমে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’-এর ডাক পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এরপরই দলটির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড পেজে দণ্ডিত তারেক রহমানের একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এ ধরনের আহ্বানের মাধ্যমে তারেকের অসহিষ্ণু চেহারা আবারও উন্মোচিত হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাইতে তারেক রহমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির পক্ষ থেকে এ ধরনের নির্দেশকে তারা রাষ্ট্রদ্রোহের কাজ বলে উল্লেখ করেন। তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপি-জামায়াত তাদের দলীয় ক্যাডারদের একত্রিত করছে। যাদের অধিকাংশই ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে রাজধানীতে অগ্নিসহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতিবেদনে ১৯৭৫-এর মতো নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ করে এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য বিএনপি নেতাদের দায়ী করা হয়েছে।
লেখক, ইতিহাসবিদ ও গবেষক শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ব্যালটের লড়াইয়ের পরিবর্তে ক্ষমতা দখলের জন্য সরকার উৎখাতের জন্য বিএনপি রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, যা অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। তিনি আরও বলেন, ‘রাজপথে ফয়সালা নেয়ার সিদ্ধান্ত সম্বলিত আহ্বান সংবিধানকে অবজ্ঞা করার শামিল। বিএনপি নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন, তারা সংবিধানকে তোয়াক্কা করেন না। আগামী ২৮ অক্টোবর কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থান এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দলটির সাম্প্রদায়িক চেহারাই উন্মোচিত হয়েছে।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘আমাদের সংবিধান প্রতিটি নাগরিককে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম পালন করার অধিকার দিয়েছে, যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি।’
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মীপূজা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা রয়েছে। সেদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেয়ার জন্য দুই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পুনঃনির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু মির্জা ফখরুল এবং জামায়াত নেতারা সে আহ্বানে কোনো সাড়াই দেননি। এটি নিঃসন্দেহে একটি অশুভ ইঙ্গিত এবং জনমনে সহিংসতার ভীতি বাড়িয়েছে।’
সমাবেশে অংশ নিতে রাজধানীতে দলীয় ক্যাডারদের একত্রিত করার বিষয়ে তারেকের আহ্বানের বিষয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরপরই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।’
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেছেন, জনসাধারণের ম্যান্ডেট নিয়ে ব্যালট পেপার বা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন করা যেতে পারে। তারেকের আহ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া আপনারা কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না। বিএনপি ও জামায়াতের অতীত রেকর্ড সহিংস, ফলে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের এ আহ্বানের বিষয়ে একই কথা বলেছেন মানবাধিকার কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। অতীতে বিএনপির শাসনামলে সংগঠিত সহিংস হামলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বর্তমানে তারেকের এ হুমকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য গভীর উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি মেনে চলে, প্রকাশ্যে এ ধরনের হুমকি দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল।’বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা, মানি লন্ডারিংসহ বেশ কয়েকটি মামলায় তারেক রহমান দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
তারেক রহমানকে ‘ক্লেপ্টোক্র্যাটিক সরকার ও সহিংস রাজনীতির’ প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওয়াশিংটনে একটি গোপন তারবার্তা পাঠান। তাতে বলা হয়, ‘তারেক রহমান ভয়ংকর রাজনীতিক এবং দুর্নীতি ও চুরির মানসিকতাসম্পন্ন সরকারের প্রতীক। তিনি বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকি। তাই তিনি যাতে কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাই করা উচিত।’
উইকিলিকসের ফাঁস করা ওই তথ্যে বলা হয়, ‘মার্কিন দূতাবাস মনে করে, রাজনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগে তারেক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্যও ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রার ক্ষতিসাধন করতে পারেন তিনি।’