কুয়াকাটায় সিডিএর পাঁচ প্রকৌশলীর ‘আনন্দপার্টি’
টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেননি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) পাঁচ প্রকৌশলী। উল্টো ওই সময়ে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে গিয়ে ‘আনন্দপার্টি’ করেছেন তাঁরা। কোনো অনুসন্ধান নয়, তাদের ছবিসহ ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে এমনটি জানা গেছে। দায়িত্বশীলদের এমন কাণ্ডে সংস্থাটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঝে বইছে সমালোচনার ঝড়।
সিডিএর নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ সংস্থার প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে গত শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। পরে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি পালন করেন। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শুভাকাঙ্ক্ষীরা জুমার নামাজের আগে জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মুনাজাতে অংশ নেন।
মুনাজাত শেষে তড়িঘড়ি করে সিডিএ চেয়ারম্যানকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান তাদের বরিশালে দাওয়াত আছে জানিয়ে বিদায় নেন। তখন তার পিছু নেন জলাবদ্ধতা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দীন, মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব দাশ, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামিম ও অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ হাসান।
তাদের এই কাণ্ডে বিস্মিত হন সেখানে উপস্থিত সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসসহ উর্ধতন কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যানের অন্যান্য সফরসঙ্গীরা।
তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘কর্মসূচি এখনো শেষ হয়নি, জুমার পর মসজিদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দোয়া ও মিলাদ মাহফিল আছে। তাছাড়া চউকের ৪০ জন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা এখনো পথে। তারা এলে একসাথে সমাধিতে পুষ্পস্তবক দেয়ার কথা। সবাই দোয়া ও মিলাদে অংশ নেবে-এমন সিদ্ধান্ত ছিল। তারা কেন চলে গেলেন, তারাই জানেন।’ তবে বিষয়টি বেমানান ও দৃষ্টিকটু হয়েছে বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান প্রধান প্রকৌশলী।
এদিকে ওইদিন সন্ধ্যায় প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দীনের ফেসবুক স্ট্যাটাসে কুয়াকাটায় গিয়ে আনন্দপার্টি করার ছবি ভেসে উঠলে শুরু হয় সমালোচনা।
জুমার নামাজের পর জাতির পিতার সমাধিসৌধ জামে মসজিদে মিলাদ শেষে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেই পাঁচজন ছাড়া সবাই অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে তাদের কুয়াকাটা যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি পরবর্তীতে বাস যোগে যাওয়া ৪০ কর্মকর্তাও। তারা তাদের ‘দলছুট’ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সিডিএর যে প্রকৌশলীরা প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কর্মসূচি ফেলে কুয়াকাটায় আনন্দপার্টির আয়োজন করেন তাদের অধিকাংশ সংস্থাটিতে জামাত-বিএনপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাদের চাকরি হয়েছে জোট সরকারের আমলে। চাকরি হয়েছে তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেতাদের সুপারিশে।
সিডিএর সংস্থাপন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের প্রত্যেকের মূল পদবি সহকারী প্রকৌশলী। তারা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে আবার সিডিএর হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পিডির (প্রকল্প পরিচালক) দায়িত্বে আছেন।
প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দীন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কুয়াকাটায় তাদের সাথে অন্য একজনের গ্রুপ ছবি এবং তাদের আনন্দপার্টির খাবারের ধূমায়িত ছবি পোস্ট করেন। সাথে দেন নিজের একটি ছবিও।
তবে ওই পাঁচ প্রকৌশলী জুমার নামাজের আগে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা একাধিক ফটোসেশনেও অংশ নেন। কিন্তু এমন কোনো ছবি এ রিপোর্ট তৈরি করা পর্যন্ত ফেসবুকে পোস্ট করেননি!
মোবাইল ফোনে আনন্দপার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। অবশ্য পরে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সবাই প্রকৌশলী মাহফুজের গাড়ির সহযাত্রী হওয়ায় তার পেছনে ছুটতে হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘কে এসেছে কে গেছে সেটা বড় কথা নয়। সংস্থার চেয়ারম্যানদের মধ্যে আমিই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম জাতির পিতার মাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। ওইদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হওয়ায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে উনার জন্মস্থানে দিবসটি পালনের সুযোগ পেয়েছি।’