পার্বত্য চট্টগ্রাম

কেএনএফে মতবিরোধ, শান্তি কমিটির বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা

পাহাড়ে নতুন গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সাথে শান্তি আলোচনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে দাবি দাওয়া পেশ ও শান্তি আলোচনায় বসা নিয়ে সংগঠনের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রুমা উপজেলার দুর্গম আর্থাপাড়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে কেএনএফের প্রথম সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ তা হয়নি। রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত অনেক দেন দরবার করেও তাদের বৈঠকে বসানো যায়নি। শেষে গতকাল রুমা থেকে জেলা শহরে ফেরত আসেন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা ও শান্তি কমিটির সদস্যরা।

এর আগে গত ৫ অক্টোবর মুন্নুয়াম পাড়ায় কেএনএফের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ৭ অক্টোবর করা হয়। পরে আজ সোমবার আর্থাপাড়ায় এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটিও ব্যর্থ হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানিয়েছেন, কেএনএফের অসহযোগিতা ও তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ তীব্র হয়ে উঠায় বুধবারের বৈঠকটি ব্যর্থ হয়েছে। তবে এখনো কেউ যদি আলোচনায় বসতে চায় তাদের স্বাগত জানানো হবে। সেই সাথে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানও অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানিয়েছেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলাকে নিজেদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল দাবি করে ও তাদের জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাসহ মোট ৬ দফা দাবি নিয়ে শান্তি কমিটির সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হয়। পাহাড়ে চলমান সহিংসতা ঠেকাতে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লাকে আহবায়ক করে সম্প্রতি বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির মুখপাত্র ছিলেন কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা। কমিটিতে ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি রাখা হয়।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি, নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার কেএনএফের সাথে যোগাযোগ করে তাদের মধ্যে ভার্চুয়ালি বৈঠক হয়। বৈঠকে অগ্রগতি হওয়ায় কেএনএফ সরাসরি শান্তি কমিটির সাথে বৈঠকে বসতে সম্মত হয়। সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে ভারত মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে রুমায় আসেন কেএনএফের ৯ শীর্ষ নেতা। তবে কেএনএফের প্রধান নাথান বম দেশে আসেননি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে বৈঠকে বসা ও ছয় দফা দাবি নিয়ে নাথান বমের সাথে বিরোধ দেখা দেয় সংগঠনের প্রধান মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লালজংময় মইয়ার। এছাড়া সংগঠনের অপর প্রভাবশালী নেতা ভানচুংলিয়ান বমের মধ্যেও দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠে। নাথান বমের সমর্থকরা শান্তি কমিটির সাথে বৈঠকে বসতে সম্মত হলেও ব্রিগেডিয়ার মইয়া দাবি-দাওয়া ও বৈঠকে বসা নিয়ে বিরোধিতা করে আসছে। এছাড়া দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে বৈঠকে বসা নিয়েও তাদের মধ্যে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে বুধবারের সরাসরি বৈঠকটি বাতিল হয়ে যায়।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে এ বিরোধের জের ধরে কেএনএফের মধ্যে শিগগিরই নতুন কমিটিও গঠন হতে পারে। তবে সব ধরনের প্রস্তুতির পরেও কেএনএফ কেন শান্তি কমিটির সাথে সরাসরি বৈঠকে বসেনি এ বিষয় নিয়ে এখনও তারা তাদের ফেসবুক পেইজে কোন কিছু জানায়নি। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে শান্তি কমিটির এই বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

এ বিষয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বম সম্প্রদায়ের সদস্য লালজার বম জানান, বুধবার সরাসরি বৈঠক করার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৈঠক না হওয়াটি ছিল খুবই দুঃখজনক। আমরা সর্বাধিক চেষ্টা করেও তাদের বৈঠকে বসাতে পারিনি।

অন্যদিকে কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা জানিয়েছেন, এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কমিটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। সব প্রস্তুতির পরও কেন তারা আলোচনায় বসেনি সেটি আমরা জানার চেষ্টা করছি। এ বিষয় নিয়ে কমিটি পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিবে। তবে ভবিষ্যতে যে কোন ধরনের আলোচনার জন্য কমিটি প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d