গাজা উপত্যকার সিংহভাগ মানুষই এখন বাস্তুচ্যুত
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে উপত্যকাটির সিংহভাগ মানুষই এখন বাস্তুচ্যুত। একদিকে যেমন সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মায়েরা অন্যদিকে পরিবার, পরিচয়হীন শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে সেখানে।
গাজার এ কান্না যেন থামবার নয়। মাত্র এক মাস বয়সী নাতি ইদ্রেস আল দিব্রির নিথর দেহ কোলে নিয়ে দিশেহারা উম জায়েদ নামের ফিলিস্তিনি নারী জানান, সন্তান জন্ম দেয়ার কিছুদিন পরই ইদ্রেসের মা বোমা হামলায় মারা গেছেন। সে সময় ইদ্রেসের পায়েও মারাত্মক ক্ষত হয়। প্রথমবার প্রাণে বেঁচে গেলেও এবার আর রক্ষা হয়নি। একমাসও বয়স হয়নি শিশুটির।
অসহায় বাবা গাজার ইসলাম হার্ব- ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় হারিয়েছেন দুই জমজ মেয়ে ও এক ছেলেকে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, সন্তানদের হারিয়েছি, স্ত্রীকে হারিয়েছি। আমাদের বাড়িঘরও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমার বেঁচে থাকার আর কোন অবলম্বন নেই।
ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় একদিকে যেমন বাবা-মায়ের বুক শূন্য করে পরপারে পাড়ি জমাচ্ছে গাজার শিশুরা অন্যদিকে বাবা-মা হারিয়ে সেখানকার অনেক শিশু এখন পরিবারহীন। তেমনই এক শিশু ১০ বছর বয়সী রাজান সাবাত। সাম্প্রতিক হামলায় দুই বোন ছাড়া তার পরিবারের সবাই নিহত হয়েছে।
রাজান জানান, তার মাথার খুলিতে চারটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। বোমায় পায়েও ক্ষত হয়েছে। তিনি এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন।
নিজের পরিচয় এখনো দিতে শেখেনি সে বা তার ছোট দুই বোন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরিচয় অজানা লিখে ভর্তি নেয় তাদের। পরে সৌভাগ্যক্রমে দূর সম্পর্কের এক চাচা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে।
রাজান দ্রুত সুস্থ হয়েই বাড়িতে ফিরতে চান। রাজান সাবাত এখনও জানে না ফিরে যাওয়ার মতো আর কোন ঠিকানা নেই তার।
গাজার অনেক শিশুই নিজের পরিচয় দিতে শেখার আগেই হারিয়ে ফেলেছে পরিবার। যুদ্ধ শেষ হলেও এইসব শিশুদের জীবন যুদ্ধ কতটা কঠিন হতে চলেছে তা অনুমেয় নয়। টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইসরাইলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে এমন অনিশ্চয়তার দিকেই ধাবিত হচ্ছে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত।