গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ প্রাণহানি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় পিঁপড়ার মতো মানুষ হত্যা করছে ইসরায়েল। চরম মানবিক সংকটে থাকা লাখ লাখ মানুষের ওপর নির্বিচারে বিমান হামলা করছে তারা। ফিলিস্তিনি বার্তি সংস্থা ওয়াফার বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নতুন করে চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, জনবহুল ও বেসামরিকদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। রোববার ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে অন্তত ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর রোববার সবচেয়ে ভারী বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের আবাসিক এলাকায় কমপক্ষে ২৫টি ইসরায়েলি বিমান হামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসক রাফাহর ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন থেকে একটি শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: এপি
ওয়াফা জানিয়েছে, বেশিরভাগ হামলায় কোনো প্রকার সতর্কতা ছাড়া বেসামরিক মানুষদের আবাসিক ভবনগুলোতে চালানো হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, গাজায় তুমুল হামলা চালানোর পাশাপাশি পশ্চিম তীরে নাবলুস, তুলকারম এবং জেনিনে হামলা চালানোর সময় ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
স্পেক্টেটর ইনডেস্ক সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টা ধরে গাজায় নিরবিচ্ছিন্ন বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
রোববার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলের হামলার ফলে গাজায় অন্তত ৪,৭৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও অন্তত ১৫ হাজার ৮৯৮ জন আহত হয়েছেন।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় মারা যাওয়া মানুষের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এর মধ্যে শনিবার রাতেই বোমা হামলায় অন্তত ৫৫ জন মারা গেছেন বলে দাবি করছে হামাস।
রোববার দেইর আল-বালাহ শহরে ইসরায়েলি বোমা হামলার পর জীবিতদের সন্ধান চলছে। ছবি: এপি
জাতিসংঘ বলছে, এখন পর্যন্ত গাজার ১৪ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ১৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন।
গাজায় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ ভবন ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘের স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে আশ্রয়ও নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে সেসব হাসপাতালও এখন খালি করতে বলা হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার উত্তরের আল কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হাসপাতালে বর্তমানে ৪০০ রোগী এবং ১২ হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতি অকাট্য সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা এ বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে। পাশাপাশি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসরণ এবং বেসামরিক মানুষদের সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
রোববার দেইর আল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে স্বজনরা। ছবি: এপি
যৌথ বিবৃতিতে পশ্চিমা নেতারা বলেছেন যে, তারা মধ্যপ্রাচ্যে একটি রাজনৈতিক সমাধান এবং টেকসই শান্তি দেখতে চান। এছাড়াও সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে অঞ্চলের মূল অংশীদারদেরসহ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন তারা।
ছয়টি দেশ হামাসের হাতে আটক দুই আমেরিকান বন্দীর মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বাকি সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় রোববার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের টেলিফোনালাপের পর বিবৃতি জারি করা হয়। ফোনালাপে অন্যান্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
এদিকে গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি এক সিনিয়র কর্মকর্তা। রোববার সিএনএনকে তিনি বলেন যে, হামাসের হাতে আটক ২০০ জনেরও বেশি জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য মার্কিন ও কাতারের প্রচেষ্টার মধ্যে গাজায় কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না।
গাজার মানবিক সংকট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয় ইসরায়েল। রোববার সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, গাজার মানবিক সংকট ইস্যুতে কিছু করা, আমাদের কোনো কাজ নয়।
রোববার খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুর মরদেহ বহনের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন এক ব্যক্তি। ছবি: রয়টার্স
নাফতালি বেনেট বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায় এ অঞ্চলে আসতে পারে এবং গাজাবাসীদের সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, এটা আমাদের কোনো কাজ নয়।’
যখন বেনেটকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ইসরায়েল গাজায় কোনো সহায়তা দেবে কিনা? তখন তিনি জানান, গাজার মানবিক সংকট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয় ইসরায়েল।
রোববার ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ারে লরা কুয়েনসবার্গের প্রোগ্রামের সময় তিনি এসব কথা বলেন। হামাসের হাতে জিম্মি থাকা বন্দীদের কথা উল্লেখ করে বেনেট জানান, মানবিক পদক্ষেপ অবশ্যই পারস্পরিক হতে হবে।
সাবেক এ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজার মানবিক সংকটের জন্য আমরা দায়ী নই। অন্যরা যদি গাজাবাসীদের যত্ন নিতে চায়, তবে তারা এটা করতে পারবে।