গাজায় হামলায় নিহত ৪ হাজার ছাড়াল
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪ হাজার ১৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। নিহত মানুষের মধ্যে শিশু ১ হাজার ৫২৪, আর নারী ১ হাজারের বেশি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ১১ সাংবাদিকও। এছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় গতকাল ৫ শিশুসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রায় ৪ হাজার ১৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৩ হাজার জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। নিখোঁজ আরো প্রায় এক হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই শিশু। গাজার সেন্ট পোরফিরিওসের গ্রীক অর্থোডক্স চার্চে হামলার শিকার কমপক্ষে ১৬ জন। আরো ডজনখানেক এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, গোলাগুলি স্ট্রিপের অন্তত সাতটি চিকিৎসা সুবিধাকে ছিটকে দিয়েছে, তারা স্থানীয় জনগণকে সেবা দিতে অক্ষম হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব বলছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বাড়ি। সংখ্যাটি গাজার মোট বাড়ির তিন ভাগের এক ভাগ। এর জেরে উপত্যকাটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে হতাহত মানুষদের খুঁজতে দেখা গেছে উদ্ধারকারীদের। তাঁদেরই একজন একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে এক শিশুর মরদেহ বের করে আনেন।
এসময় পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা জৌমানা খরেইস বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা চাই, ঘুমের মধ্যে শিশুদের হত্যা বন্ধ করা হোক। এসব দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত।’
এদিকে গতকাল হামাসের হাতে আটক দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। একে শুভেচ্ছার নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন হামাস নেতা গাজী হামাদ। তবে মুক্তির বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি হোয়াইট হাউস। বন্দীদের মধ্যে যাঁরা ইসরায়েলি নন, সম্প্রতি তাঁদের ‘অতিথি’ হিসেবে অভিহিত করেছিল হামাস। সেই সঙ্গে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিল।
গেল ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায়। এরপর থেকে গাজায় নারকীয় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার একটি হাসপাতালে হামলায় নারী, শিশুসহ ৪৭১ জন নিহত হন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছে একটি গ্রিক অর্থোডক্স গির্জাও। গির্জাটিতে শত শত মুসলিম ও খ্রিষ্টান প্রাণ বাঁচাতে ঠাঁই নিয়েছিলেন।
চার্চ অব সেন্ট পরফিরিয়াস নামের উত্তর গাজার এ গির্জায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের আঁধারে ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত এক কিশোরকে বের করে আনা হচ্ছে। উদ্ধারকারী একজন জানান, গির্জার ওপর তলায় থাকা দুজন বেঁচে গেছেন। আর যাঁরা নিচতলায় ছিলেন, তাঁরা মারা গেছেন। মরদেহগুলো ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে রয়েছে।
গির্জায় হামলায় ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামলার বিষয়ে গির্জা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হামলা ‘যুদ্ধাপরাধ ও কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়’।
এদিকে গতকাল ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, উত্তর গাজার আল–কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। হাসপাতালটিতে ৪০০ রোগী ভর্তি আছেন ও ১২ হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।