চট্টগ্রামে অবহেলায় মাথাচাড়া দিচ্ছে ‘ব্রেন টিউমার’, হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন ডাক্তাররা
চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৮ নম্বর নিউরো মেডিসিন ওয়ার্ডে কথা হয় কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার বাসিন্দা আশেক রহমানের (২২) সঙ্গে। মাঝে মাঝে তার মাথা ব্যথা করতো। মাথা ব্যথার পাশাপাশি শুরু হয় বমি।খাবারও হজম হত না তার।স্থানীয় মেডিসিন ডাক্তারকে দেখালে তিনি আশেককে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দেন। এরপরও না কমলে তাকে চোখের ডাক্তার দেখাতে বলা হয়।
কুতুবদিয়া থেকে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে এসে চোখের ডাক্তার দেখান আশেক। ডাক্তার চশমাও দেন। শহর থেকে যাওয়ার পর তিনি একদিন অজ্ঞান হয়ে যান। তারপর তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে ডা. শামীম বকসকে দেখান। ডাক্তার রোগের উপসর্গ শুনেই সিটিস্ক্যান করাতে বলেন। সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে ব্রেন টিউমার। পরে একজন নিউরো মেডিসিন স্পেশালিস্টকে দেখিয়ে তার পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হন আশেক। কিছুদিন পর তার অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে।
আশেকের মতো এমন অনেকেই আছেন যারা ব্রেন টিউমারের লক্ষণ সম্পর্কে অবগত নন। ফলে রোগ শনাক্তে যেমন দেরি হয় তেমনি চিকিৎসা পেতে পেতে ততদিনে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়।
নিউরো মেডিসিনের ডাক্তাররা বলছেন, অস্বাভাবিকভাবে বমিভাব ও বমি হওয়া হতে পারে ব্রেন টিউমারের লক্ষণ। কেউ যদি হঠাৎ বমিভাব কিংবা বমি হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে না পান, তবে এমনটার জন্য ব্রেন টিউমার দায়ী হতে পারে।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ব্রেন টিউমার অপারেশনের রোগী বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৫ জন। আর ১৮ নম্বর নিউরো মেডিসিন ওয়ার্ডে ব্রেন টিউমার শনাক্ত হওয়া রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৫ জন। বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের সবারই রোগ নির্ণয় হয়েছে দেরিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হোন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশে এই সংখ্যা বছরে প্রায় ৬ হাজারের মতো।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্রেন টিউমারের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে। আসলে ধরন দেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে সবসময় আমরা এমন রোগী পাই, যারা রোগের শুরুতে চিকিৎসায় বিভ্রান্তির শিকার হন। ব্রেন টিউমারের লক্ষণ ও চিকিৎসা জোরালোভাবে প্রচার হওয়া উচিত। আসলে আমাদের দেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় ব্যয় করলেও মেডিকেল টার্মে চোখ রাখেন না। হেলথ টার্মে চোখ রাখলেও রোগ সম্পর্কে জানা থাকলে রোগী নিজেই ডিসিশন নিতে পারেন যে, তাকে নিউরো মেডিসিন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।’
ডা. হাসানুজ্জামান বলেন, ব্রেন টিউমার হলে সবসময় যে মাথা যন্ত্রণা হবে, তা কিন্তু নয়। তবে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মূল লক্ষণ হলো মাথা ব্যথা। তবে মাথা ব্যথা হলেই যে মস্তিষ্কের টিউমার বা ক্যান্সার, তা কিন্তু নয়। মাথা ব্যথার যত কারণ আছে তার বেশির ভাগই কিন্তু অন্য। মস্তিষ্কের টিউমারের মাথা ব্যথার ধরন একটু ভিন্ন। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে মাথা ব্যথা সারাক্ষণ থাকে, পুরো মাথায় হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যথা থাকে। হাঁচি-কাশি দিলে মাথা ব্যথা বেড়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ব্যথা বেশি হয়। মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি হতে পারে। শরীরে কোনো একটি দিক অবশ অনুভূত, চোখে দেখতে অসুবিধা, কথাবার্তায় অসংলগ্নতা, হঠাৎ করে কিছু কথা ভুলে যাওয়া, হঠাৎ শরীরে খিঁচুনি ধরাও হতে পারে।’