চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলন : পরবর্তী কর্মসূচির চাঁদা তুলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা
ক্লান্ত শরীরে কেউ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসা, কেউ রেললাইনে। অপেক্ষা করছেন শাটলের। ট্রেন এলে ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদের কয়েকজনের একটি অংশ পরবর্তী কর্মসূচির জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে আন্দোলন কর্মসূচি শেষ করে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে সেখানে এমন চিত্র দেখা যায়। চাঁদা তোলা শেষে রাত ৯টার ট্রেনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কর্মসূচি শেষে এভাবেই সকলের কাছ থেকে পরিবর্তী কর্মসূচির খরচের জন্য চাঁদা আদায় করে থাকি’।
এদিকে, আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় ফের ষোলশহরে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়কারী রাসেল আহমেদ। এরপর সেখান থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
দুপুর আড়াইটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কথা ছিল। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে তারা বিকাল ৪টার দিকে বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো হতে থাকেন।
এরপর তারা মিছিল নিয়ে নগরের টাইগারপাস সড়ক অবরোধের জন্য এগিয়ে আসেন। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মিছিলের পেছনে এবং সামনে থেকে তাদের ঘিরে অবরুদ্ধ করে ফেলেন।
বিকাল ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত পুলিশ তাদের অবরুদ্ধ করে রাখলেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেই লালখানবাজার হয়ে ওয়াসা মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। এ সময় তাদের পেছন পেছন যায় পুলিশও।
এ সময় ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে পুলিশের উদ্দেশে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করলেও আহত হন কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী। এ সময় একজন নারী পুলিশ সদস্যকেও আহত অবস্থায় দেখা যায়।
এরপর শিক্ষার্থীরা ফের মিছিল নিয়ে জিইসি মোড় হয়ে চলে যান দুই নম্বর গেটে। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা সেখানে মিছিল নিয়ে পোঁছামাত্র পুলিশ তাদেরকে লাঠিচার্জ করে।
পরে দুই নম্বর গেটে আস্তে আস্তে জড়ো হন শত শত শিক্ষার্থী। তারা ওই সময় কোটাবিরোধী এবং পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদেরকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেও সড়ক থেকে সরাতে ব্যর্থ হন।
আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আজ সারারাত আমরা এখানেই অবস্থান করবো। আজ থেকে আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচিও পালন করবো। এরপর রাত ৮টার দিকে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে তারা ষোলশহর স্টেশনে চলে যান।
শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে যানজট ছড়িয়ে পড়ে নগরের চারদিকে। বিকেল থেকে প্রায় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের কারণে বহদ্দারহাট, জিইসি, বায়েজিদ, চকবাজার অভিমুখী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী মানুষ।