চট্টগ্রাম

চাকরির নামে বন্ধুকে মিয়ানমারে পাচার

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা মো. শাহীন বন্ধুর প্ররোচনায় চাকরির নামে মানব পাচার চক্রের হাতে পড়েন। তার বন্ধু ছাড়াও অনেক বাংলাদেশি ও একাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক জড়িত মানব পাচার চক্রের সাথে।

শাহীন যখন বুঝতে পারেন তখন আর কিছু করার ছিল না তার। জিম্মিদশায় তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মিয়ানমারে। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয় তাঁর পরিবারকে। আর সেই টাকা না দিতে তাঁর ওপর চলে নিষ্ঠুরতার সীমা ছাড়ানো নির্যাতন-নিপীড়ন। এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে জীবনে শাহীন সর্বনাশ ডেকে আনলেও আরেক বন্ধু বন্দি থাকা অবস্থায় আসে রক্ষক হয়ে। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে তিনি ফেরেন দেশে। এখনো তাকে তাড়া করে বেড়ায় অজানা এক আতঙ্ক। চোখে-মুখে স্পষ্ট সেই আতঙ্কের ছাপ। যদিও পাচারের সাথে জড়িত দুজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দেশে ফেরার পর নতুন জীবন’ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও দুই মাসের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে পড়তেই বিমর্ষতা ভর করে তার ওপর।

মো. শাহীন বলেন, ‘আমাদের একটা বন্ধু ছিল। আমরা একসাথে অটোরিকশা চালাতাম। আমাদের দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচয়। তার মাধ্যমে কক্সবাজারের ইয়াছির নামে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়। তার সাথেও আমার বন্ধুত্ব হয়। সে আমাকে হঠাৎ একদিন বিদেশে কাজের জন্য প্রস্তাব দেয়। আমাকে সে বললো—মাসে ২৯ হাজার টাকা বেতনে মিয়ানমারে নৌবাহিনীর একটি প্রজেক্টে লোক নিবে। সেখানে আমাকেও সে চাকরি পাইয়ে দেবে। আমি তার কথামতো যেতে সম্মতি জানাই। বিনিময়ে আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। বিদেশ গিয়ে টাকা দেওয়ার বিষয়ে তার সাথে মৌখিক চুক্তি হয় আমার। হঠাৎ চলতি বছরের ১০ অক্টোবর সকালে সে আমাকে ফোন দেয়। বলে, আমরা সবাই বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তুই রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয়। সকাল ৮টার দিকে আমিসহ মোট ৩ জন বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন চান্দগাঁও থানার সামনে যাই।’

‘সেখান থেকে বাসে করে আমরা প্রথমে কক্সবাজারের লিংক রোডে পৌঁছাই। সেখানে বাস থেকে নেমে শাহেদ নামে স্থানীয় একজনকে সিএনজি নিয়ে দাঁড়ানো দেখতে পাই। সেই সিএনজিতে করে মোট আমরা ৪ জন টেকনাফ গোলচত্বরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। ঠিক সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে টেকনাফ যাওয়ার পর আবার সিএনজি থেকে আমাকে নামিয়ে একটি অটোরিকশায় তোলা হয়। তখন আমাকে বলা হয়, তুই এটাতে চলে যা। আমরা সবাই নাশতা নিয়ে আসছি। তুই কোন চিন্তা করিস না। অটোরিকশায় করে অর্ধেক পথ যাওয়ার পর পেছনে আগে থেকে থাকা একজন আমার গলায় ছুরি ধরে। আমি তাকে যাত্রী ভেবেই অটোরিকশায় উঠেছিলাম। এরপর গাড়িচালক দ্রুত গাড়ি নিয়ে একটি জঙ্গলে চলে যায়। সেখানে আরও ৩ জন লোক ছিল। তাদের মধ্যে একজনের হাতে ছুরি ছিল।’- যোগ করেন শাহীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d