চট্টগ্রাম

চার দেয়ালে ভর যে মসজিদের

বড় বড় কোন স্তম্ভ নয়, মাত্র চারটি দেয়ালের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে ১৩ হাজার বর্গফুটের মসজিদ। মসজিদটির অনন্য বৈশিষ্ট্য মুসল্লিরা যে কাতারেই দাঁড়াক না কেন, ইমামকে দেখা যাবে কোন বাধা ছাড়াই। শুধু তাই নয়, দেশের সবচেয়ে বড় স্তম্ভবিহীন নান্দনিক মসজিদও এটি।

কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলস আবাসিক এলাকায় স্তম্ভবিহীন এই মসজিদের অবস্থান। চার হাজার মুসল্লি একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন এতে। স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত এই নয়নাভিরাম মসজিদটি এখনো অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির তথ্যমতে, ১৯৬৭ সালে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শ্রমিক ও কর্মচারীদের সুবিধার্থে কর্ণফুলী পেপার মিলস আবাসিক এলাকার অভ্যন্তরে এটি নির্মাণ করা হয়। এর আগে ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপ কর্ণফুলী পেপার মিসের দায়িত্ব নেওয়ার পর মসজিদটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ১৯৬৭ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন দাউদ গ্রুব অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ দাউদ এইচ কে এই মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

নান্দনিক এই মসজিদটির কিছু আকর্ষণীয় স্থাপনা রয়েছে যেগুলো মানুষকে মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে মসজিদটির নির্মাণশৈলীতে মুসলিম ঐহিত্যের বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মসজিদের চার দেয়াল ছাড়া মাঝে আর কোন স্তম্ভ নেই। স্তম্ভবিহীন এই নান্দনিক মসজিদের ভেতর কাঠের ফ্রেমের ওপর হার্ডবোর্ড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সিলিং। মসজিদে বারান্দাসহ ১৭টি কাতার আছে। প্রতিটি কাতারে অনায়াসে দাঁড়াতে পারেন ১২০ জন মুসুল্লি। বিশাল এই মসজিদে দৃষ্টিনন্দন প্রায় ৩৮টি বাতি রয়েছে।

এছাড়া মসজিদের তিন পাশে রয়েছে ২৩টি জানালা, ৯টি দরজা। সেইসাথে মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদটি অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত এলাকায় স্থাপিত হওয়ার ফলে মসজিদের ভেতরটা প্রায়সময় বেশ শীতল থাকে।

কেপিএম এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা গেছে, মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহৃত সামাগ্রীগুলো আনা হয়েছিলো তৎকালীন করাচি থেকে। পুরো এক বছর লেগেছে এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করতে।

‘একসময় কর্ণফুলী পেপার মিলস যখন সোনালী দিন পার করছিলো তখন প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত থাকতো এই মসজিদটি। তবে বর্তমানে কালের বির্বতনে মসজিদটি হারিয়েছে জৌলুস। এখন কর্ণফুলী পেপার মিলস এলাকায় বাসিন্দা যেমন কমে এসেছে। তেমনি এর প্রভাব পড়েছে মসজিদেও। বর্তমানে শুধু জুমার দিনে ব্যাপক মুসল্লির সমাগম হয়।

সম্প্রতি মসজিদটি ঘুরে দেখা গেছে, বয়সের ভারে মসজিদের দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ঝরে পড়ছে সিলিং। ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ মসজিদটির দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মসজিদের ইমাম মো. এটিএম আব্দুল্লাহ বলেন, আমি দীর্ঘ বছর ধরে এই মসজিদের ইমামতি করছি। স্তম্ভবিহীন দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি। জানতে পেরেছি, ঐতিহাসিক একটি মসজিদ।

‘মসজিদটির দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ছাদ ও জানালা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। তবে ইতিমধ্যে এলাকার কিছু সহৃদয়বান ব্যক্তি এবং সরকারি সহযোগিতায় মসজিদের বাউন্ডারি ওয়ালের কিছু দৃষ্টিনন্দন কাজ করা হয়েছে। বাকি সমস্যগুলো দ্রুত সমাধানের অনুরোধ’ — যোগ করেন মসজিদের ইমাম এটিএম আবদুল্লাহ।

মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল বাশার, মো. রহমান আলী, আব্দুর সালাম। তারা সকলেই বললেন, একসময় এলাকার এই মসজিদে প্রতিদিনই অনেক মানুষের উপস্থিতি থাকতো। স্তম্ভবিহীন দেশের একমাত্র মসজিদটি রক্ষার প্রয়োজন।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল আজিজ ভুইয়া বলেন, কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কেপিএম জামে মসজিদটি একটি দীর্ঘ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মসজিদ হিসেবে বেশ সুপরিচিত। তবে বর্তমানে মসজিদটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে মসজিদের দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, পলেস্তরা খসে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করছে মসজিদের ভেতরে।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী স্তম্ভবিহীন এই মসজিদটির মৌলিকতা ধরে রেখে সংস্কার ও মসজিদটিকে প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d