চট্টগ্রাম

চার বছর আগেই শেষ প্রকল্পের মেয়াদ, তবুও শেষ হয়নি কাজ

চার বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে প্রকল্পের মেয়াদ। তবুও শেষ হয়নি কাটিরহাট রেলস্টেশন ভবনের নির্মাণকাজ। দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী টিনের ঘরেই চলছে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট রুটের এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের কার্যক্রম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কাটিরহাট রেলস্টেশন ব্যবহারকারী উত্তর চট্টগ্রামের যাত্রীরা। অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে স্টেশনের মূল্যবান মালামাল।

সংশ্লিষ্টরা জানান- ২০১৯ সালে কাটিরহাট নতুন রেলস্টেশন নির্মাণে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স এন্ড সাপ্লাইয়ার্স। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪২ লাখ ৭ হাজার টাকা। মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর। কাজ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক পরিশোধের পরও কাটিরহাট রেলস্টেশন ভবন নির্মাণ শেষ না করেই কাজ বন্ধ করে দেয় মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স এন্ড সাপ্লাইয়ার্স। এর কারণ হিসেবে অর্থ সংকটের কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে রেলওয়ের প্রকৌশল দপ্তর এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে দেন দরবার চলে। তবে কাজ অসম্পূর্র্ণই রয়ে যায়।

কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স এন্ড সাপ্লাইয়ার্সের মালিক মো. শাহাদাত হোসেন তামিম বলেন, মূল ভবনের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। রেল বিভাগের অর্থ সংকটের কারণে ভবনটির টাইল্স, দরজা, জানালা, গ্লাস ও রঙের কাজসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়নি। রেলওয়ে থেকে টাকা পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা হবে।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. আবদুল হানিফ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আজকেও (গতকাল বৃহস্পতিবার) কথা হয়েছে। তাদেরকে রেলস্টেশন ভবনের কাজ শেষ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন তারা। চলতি বছরেই এটি চালুর বিষয়ে আমরা আশাবাদী।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার চার বছর পরেও নতুন রেলস্টেশন ভবন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ওয়েটিং রুম ও শৌচাগার না থাকায় বেশি বিপাকে পড়ছেন এই স্টেশন ব্যবহারকারী যাত্রীরা। স্টেশনের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে স্থানীয়দের তৈরি অস্থায়ী টিনের ঘরে। এতে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে স্টেশনের মূল্যবান মালামাল।

কাটিরহাট রেলস্টেশনের দায়িত্বরত বুকিং সহকারী ইনচার্জ আবু নাইম মো. ইউচুপ বলেন, নতুন স্টেশন ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় অফিসের মূল্যবান আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শৌচাগার ও বসার স্থান না থাকায় ট্রেনের যাত্রীদের, বিশেষ করে মহিলাদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর কাজ না করায় নতুন ভবনটিও অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে।

যাত্রীরা জানান- ২০১৯ সালে নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণের জন্য পুরোনো স্টেশন ভবনটি ভাঙা হয়। এরপর থেকে তারা টিনের তৈরি প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়ান। সেখানে বৃষ্টির পানি পড়ে টিকিটসহ সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়। কখনও কখনও ভারী বৃষ্টি ও বাতাস হলে প্ল্যাটফর্মের টিন উড়ে যায়। দ্রুত এই অবস্থার অবসান জরুরি। না হয় মানুষ ট্রেনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

স্থানীয় যাত্রী শাহজাহান মাহবুব জানান, যে কাজ ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর শেষ করার কথা- সেটি ২০২৪ সালের ৩ জুলাইও শেষ করা গেল না। কার গাফিলতিতে এটা হলো- তা খতিয়ে দেখা জরুরি। সরকার রেলওয়ের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে, কিন্তু বরাদ্দের সুষ্ঠু ব্যবহার না হওয়ায় মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। দ্রুত কাটিরহাট রেলস্টেশন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d