জ্বালানি তেল পরিবহনে আসছে স্মার্ট নজরদারি
দেশের জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থা স্মার্ট নজরদারির আওতায় আনতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য জ্বালানি তেল পরিবহনে ব্যবহৃত সব ট্যাংকার ও ট্যাংক লরিতে ডিজিটাল লক ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তেল চুরি ও ভেজাল তেল মেশানো বন্ধের পাশাপাশি জ্বালানি তেল পরিবহন আরও নিরাপদ হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের স্বল্পমেয়াদি কর্মপরিকল্পনায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জ্বালানি তেল পরিবহনে ডিজিটাল নজরদারির উদ্যোগটি বাস্তবায়নে বিপণন কোম্পানিগুলোতে নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ২০২৫ এর ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য ২ হাজার ৮০০টি নিবন্ধিত ট্যাংক লরি এবং ১০০টি ট্যাংকার রয়েছে। কিন্তু এসব ট্যাংক লরি বা ট্যাংকারে ডিজিটাল লক বা ট্র্যাকিং সিস্টেমও নেই। ফলে জ্বালানি তেল পরিবহনের সময় চুরি এবং ভেজাল তেল মেশানোর ঘটনা ঘটলেও কারও কিছু করার থাকে না।
এ কারণে এসব ট্যাংক লরি ও ট্যাংকার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য ডিজিটাল লক স্থাপন করা হবে। যাতে পরিবহনের সময় যেকোনও জায়গা থেকে কেউ ট্যাংক লরির লক খুললেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মালিকের কাছে সংকেত পৌঁছে যাবে। একইসঙ্গে ট্র্যাকিং সিস্টেম স্থাপন করার কারণে মালিক দেখতে পারবেন কোথায় ট্যাংক লরিটি অবস্থান করছে।
দেশে বিপিসির হয়ে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিনসহ সবধরনের জ্বালানি তেল বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করে যমুনা, পদ্মা এবং মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এসব বিপণন কোম্পানির ডিপো থেকেই ট্যাংকার বা ট্যাংক লরিতে জ্বালানি তেল ভরে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। যা ডিলার বা পরিবেশক হয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যায়।
জানতে চাইলে বিপিসির জ্বালানি তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আনচারী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের জ্বালানি বিভাগ একটি স্বল্পমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সব ট্যাংক লরিতে ডিজিটাল লক এবং জিপিএস সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি।
তিনি বলেন, ট্যাংক লরিতে ডিজিটাল লক এবং জিপিএস সিস্টেম চালু হলে তেল চুরি, ভেজাল তেল মেশানো বন্ধের পাশাপাশি কোন ট্যাংক লরি কোথায় অবস্থান করবে তা সহজেই জানা যাবে। এতে জ্বালানি তেল বিপণন কার্যক্রমে আরও বেশি স্বচ্ছতা আসবে। সব স্টেকহোল্ডার লাভবান হবেন। স্মার্ট জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রায় ৭০ লাখ টন পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা আছে। অপর্যাপ্ত পরিশোধন সুবিধার কারণে এর ৮০ শতাংশ পরিশোধিত আকারে আমদানি করা হয়। পরিশোধন বা আমদানির পর প্রায় সব পেট্রোলিয়াম পণ্য চট্টগ্রাম থেকে সড়ক বা নৌপথে ট্যাংক লরি বা ট্যাংকারের সাহায্যে সারাদেশে পৌঁছে দেয়া হয়। বিপণন কোম্পানিগুলো এ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
অভিযোগ রয়েছে- জ্বালানি তেল বা পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহনের সময় কিছু অসাধু চক্র এতে ভেজাল তেল মিশিয়ে দেয়। ট্যাংক লরি বা ট্যাংকার থেকে জ্বালানি তেল চুরির ঘটনাও ঘটে। মূলত নজরদারির অভাবেই চক্রটি এই সুবিধা নেয়। এখন ডিজিটাল লক এবং জিপিএস সিস্টেম চালু হলে জ্বালানি তেল পরিবহন প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল নজরদারি সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।