কক্সবাজারচট্টগ্রাম

টেকনাফ সীমান্তে চাপা আতঙ্ক, চিংড়ি ঘের নিয়ে বিপাকে মৎস্য চাষিরা

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় এপারে কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিন-রাত থেমে থেমে গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্তের গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে চিংড়ি ঘেরে যেতে না পারায় আয় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে চাষিদের।

সময়মতো ঘেরে মাছের পরিচর্যা ও মাছ তুলতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন চাষিরা। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শহর শীলখালী, কুমিরখালী ও বলিবাজার থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

এদিকে টেকনাফে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে শত শত মাছের ঘের পড়েছে আছে পরিচর্যা ছাড়া। মিয়ানমারের সীমান্ত উত্তেজনার কারণে যেতে পারছেন না চাষিরা। এতে তাদের উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে পড়েছে।

টেকনাফ উনছিপ্রাং এলাকার চিংড়ি চাষি জুনায়েদ বলেন, গতবছর বন্যা ও সীমান্ত উত্তেজনার কারণে ঘের থেকে তেমন মাছ তুলতে পারেনি। যার কারণে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। এই বছর ৫ লাখ টাকার বাগদা চিংড়ি মাছ পোনা (মাছের বাচ্চা) দিয়েছি। মাছও বেশ বড় হয়েছে। ৩০টি চিংড়িতে এক কেজি হয় এমন সাইজ হয়েছে। কিন্তু সীমান্তে এই বছরও উত্তেজনার কারণে ঘেরে যেতে পারছি না। এতে বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকি বাড়ছে। কিছু করার নেই। যে হারে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি, আর্টিলারি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ হচ্ছে। এতে আমাদের জীবন ঝুঁকিতে আছে।

ঝিমংখালীর চিংড়ি চাষি আকতার আহমদ বলেন, কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে ভেতরে যুদ্ধ চলছে। এতে আমদের সাধারণ মানুষকে সীমান্তের কাছাকাছি চিংড়ি চাষিদের ঘেরে যেতে দিচ্ছে না বিজিবি। আমরা ব্যাংক থেকে অনেক টাকা লোন নিয়ে এসব চিংড়ি চাষ করছি। সময়মত মাছ না ধরলে মাছ মারা যাবে। এভাবেই চলতে থাকলে মাছ তো দূরের কথা কিছু পাব না। আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।

উনছিপ্রাং মৎস্য সমিতির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, আমাদের সমিতির অনেক চিংড়ি ঘেরে যেতে পারছে না। যার কারণে মাছের পরিচর্যা করতে পারছে না। যার কারণে মাছের অনেক বাচ্চা মরে যাচ্ছে।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, টেকনাফে মোট ৪২৭টি চিংড়ি ঘের আছে। তার মধ্যে ৮৪২ জন চাষি।

টেকনাফ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, টেকনাফ মোট ৪২৭টি চিংড়ির ঘের আছে। তার মধ্যে ৮৪২ জন চাষি। সীমান্তে উত্তেজনা চললে আমরা বিজিবিকে অনুরোধ করেছি অন্তত একজন করে হলেও ঘেরে গিয়ে মাছের পরিচর্যা করার অনুমতি চেয়েছি। না হয় মাছগুলো মরে গেলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে পারে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে প্রভাব পড়বে এখানকার জীবন জীবিকা আর অর্থনীতিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d