দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ আজ
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী চাপসহ অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শিরোনাম সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠনের পর বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি।
এটি দেশের ৫৪তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২১তম বাজেট। আর টানা ১৬তম বাজেট এটি।
জাতীয় সংসদে স্পিকার ডদশমিক শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদন করে নেওয়া হবে এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মোদশমিক সাহাবুদ্দিন। পরে সংসদে পাস হয়ে ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
নতুন বাজেটের আকার: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে বাড়ছে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। যা চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা করে সরকার। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হতে পারে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
নতুন বাজেটে জিডিপি: আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এটি হতে পারে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। অবশ্য বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বাজেটের আয় বা রাজস্ব আদায়: প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের প্রধান আয় হচ্ছে রাজস্ব আয়। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। নতুন রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারও বেশিরভাগ আয় করার দায়িত্বটি থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওপর। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এবার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করতে হবে এনবিআরকে। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণের চ্যালেঞ্জ থাকছে আগামী বাজেটেও।
বাজেটের ব্যয়: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৬৪ শতাংশ অর্থ পরিচালন ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এর আগে কখনো পরিচালন ব্যয়ে এতো বেশি হারে বরাদ্দ রাখা হয়নি। এছাড়া বাজেটের ১৪ শতাংশের মতো অর্থ ব্যয় হবে ঋণের সুদ পরিশোধে। ফলে উন্নয়ন ব্যয়ে অর্থের বরাদ্দ দাঁড়াবে ২২ শতাংশের মতো।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি): নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হতে পারে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপির আকার করা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতে পারে। এ ছাড়া নতুন অর্থবছরে আসল পরিশোধে ব্যয় করা হবে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা।