জাতীয়

নাব্যতা সংকটে দেশের ৯০ শতাংশ নদী: সবুজ আন্দোলন

সম্প্রতি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে হওয়া ভয়াবহ বন্যার প্রধান কারণ নদীর নাব্যতা সংকট বলে মনে করে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন। তাদের দাবি, দেশে বর্তমানে এক হাজার ৮টি নদী থাকলেও এর ৯০ শতাংশ নাব্যতা সংকটে ভুগছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ‘নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার ও জনগণের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা জানান সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার।

সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে বাপ্পি সরদার বলেন, দেশে বর্তমানে ১০০৮টি নদী থাকলেও ৯০ শতাংশ নদী নাব্যতা সংকটে ভুগছে। ইতোমধ্যে দেশের শতাধিক নদী বিলীন হয়ে গেছে। ঢাকা বিভাগে ১৬৮টি, বরিশাল বিভাগে ৯০টি, খুলনা বিভাগে ১২৪টি, রাজশাহী বিভাগের ১১০টি, রংপুর বিভাগে ২৬৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩৫টি নদী রয়েছে। নদীর পাড় দখল ও দূষণে জর্জরিত। জেলাভিত্তিক জরিপে দেখা গেছে, শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শতভাগ নদী দখল ও দূষণের শিকার। সামগ্রিক অর্থে নদীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হতে পারতো বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, কিন্তু বর্তমানে তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতার সাথে জড়িত রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে নদীর দখল বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি এ দেশের জলাশয় ও জলজ পরিবেশ ক্রমশ ধ্বংসের পথে। প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশের গুণাগুণ হারিয়ে এখন দূষিত। পাশাপাশি ক্রমশ ভরাট হচ্ছে জলাশয়। জলাভূমি দূষণ, নগরায়ন, ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের অধিক প্রয়োগসহ বিভিন্ন কারণে আবাসস্থল সংকটে উভচর প্রাণীরা। ফলাফল স্বরূপ ক্রমেই কমছে কৃষকের নীরব বন্ধু এই প্রাণীর সংখ্যা। বাংলাদেশে কাইট্রিড নামক ছত্রাক এবং রানা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে কাইট্রিডের উপস্থিতির গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই ছত্রাক ঘটিত রোগের কারণে বিলুপ্তির সম্মুখীন হতে পারে আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু ব্যাঙ। সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী বিশেষ করে সাপের প্রতি ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাস, যা এখনও বিরাজমান। দিন যত যাচ্ছে মানব জনসংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে মানুষ হাত বাড়াচ্ছে বনের দিকে। খাদ্য চাহিদা পূরণে অধিক ফসলের জন্য নতুন জমি, নতুন আবাসস্থল, স্থাপনা সবকিছুই হচ্ছে প্রকৃতিক পরিবেশ কে বিনষ্ট করে।

সভায় নদীর বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-

১। আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে সকল নদীর ওপর থেকে বাঁধ অপসারণ করা এবং নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরণে নতুন বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে সারা দেশের নদী খনন শুরু করতে হবে।

২। দেশের সকল নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখল দায়িত্ব উচ্ছেদ করা

৩। নদীমাতৃক অর্থনৈতিক গুরুত্ব তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত আবাসন নীতি মালা প্রণয়ন করতে হবে।

৪। বিলুপ্তপ্রায় নদীর গতি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ম্যাপে যে সকল নদীর অস্তিত্ব রয়েছে তা পুনরায় খননের ব্যবস্থা করা।

৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বন্যপ্রাণী যাতায়াতে আন্ডারপাস করিডোর নির্মাণ করতে হবে।

৬। শক্তিশালী ও স্বাধীন বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন বাস্তবায়নে লোকবল নিয়োগ, দোষীদের শান্তি প্রদানে আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান রেখে আইন সংস্থার করতে হবে।

৭। জলাশয় ভরাট বন্ধে দেশের সকল জলাশয় চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ ও খননের উদ্যোগ নিতে হবে।

৮। পরিবেশবাদী সংগঠন, গবেষক ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে সরকারিভাবে স্টেকহোল্ডার বডি তৈরি করে মাসিক সেবা চালু করতে হবে।

৯। পরিবেশ বিষয়ক গবেষণায় জোরদার করতে জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি সকল প্রকার দুর্নীতি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ফিরোজ জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ড আদিল মুহাম্মদ খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম সরোয়ার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন মাতৃভূমি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম হানিফ মাস্টার, অর্থ পরিচালক মো. ফিরোজ আলম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d