নিয়ম না মেনে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল
জোয়ারের সময় কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায় ফেরিঘাট। এ পানি ডিঙিয়ে ওঠানামা করতে হয় ফেরিতে। এ সময় ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। প্রবল স্রোতের মাঝে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার করতে হয়। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনা।
গতবছরের ১ আগস্ট কালুরঘাট সেতুর সংস্কার শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নদী পারাপারে কালুরঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এই ফেরি চালুর প্রথমদিন থেকেই পোহাতে হচ্ছে পদে পদে ভোগান্তি।
কালুরঘাট সেতু সংস্কারকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে পৌঁছালেও পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। সেতুটি যান চলাচলের জন্য উপযোগী করতে অন্তত আরও কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কারকাজের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীরা। তবে বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দারা জানান, এই সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে নদী পারাপারে ভোগান্তি কমে আসবে।
গতকাল সোমবার সরজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ওয়াকওয়ে দিয়ে পথচারীরা হেঁটে পারাপার করছেন। যান চলাচলের জন্য সেতুতে কার্পেটিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এর মধ্যে নিয়ম না মেনেই মোটরসাইকেলসহ টেম্পো-ট্যাক্সি চলাচল করছে সেতু দিয়ে।
জানা গেছে, প্রায়সময় সেতু দিয়ে যানবাহন উঠে পড়ছে। একমুখী এই সেতুতে ট্রাফিক কন্ট্রোল না মেনে সেতুতে গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। উভয়দিক থেকে গাড়ি উঠে পড়লে সেতুর মাঝে যানজটে নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
কাজ শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি চলাচল করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও চলমান কাজের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছে সংস্কারকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এজন্য বাকি কাজ শেষ করা পর্যন্ত ধৈর্য ধারনের অনুরোধ করেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেতুতে কার্পেটিংয়ের কাজ এখনও ২৫ শতাংশ বাকি রয়েছে। সংস্কারকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্নের আগে যান চলাচল ঠিক হবে না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, সেতু দিয়ে হেঁটে পারাপারের জন্য সেতুতে যুক্ত করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। নবনির্মিত ওয়াকওয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার সময় খুলে দেওয়া হয়। ওয়াকওয়ে দিয়ে মানুষজন হেঁটে পারাপার করলেও যান চলাচলের জন্য সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। ট্যাক্সিচালক আবু মিয়া বলেন, সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দিলে ভালো হতো। ভোগান্তির মধ্যে ফেরি দিয়ে নগর যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সংস্কারকাজ দ্রæতসময়ে শেষ করার ব্যাপারে প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বিল ঠিকভাবে পাওয়া গেলে কাজ দ্রুত শেষ করা যেতো। নির্ধারিত সময়েও সেতুর সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ার জন্য আর্থিক সংকটকে দায়ী করছেন রেলওয়ে ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন, সময়মতো সংস্কারকাজের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ কারণে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে নির্মাণ-উপকরণসামগ্রী আনার ক্ষেত্রেও সময় বেশি লেগেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সেতুর সংস্কারকাজে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি। গতবছরের ডিসেম্বরে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩৭ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু রেলওয়ের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এখনও বকেয়া রয়েছে ১৭ কোটি টাকা। বিল ঠিকভাবে পাওয়া গেলে কাজ আরও আগে শেষ করা যেতো। এখন পর্যন্ত পিচঢালার কাজ হয়েছে ৭৫ শতাংশ। বাকি কাজ শেষ করতে ১৫ দিন সময় লাগবে। এরপর তা যান চলাচলের উপযোগী হয়েছে কিনা- পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দল।