রাজনীতি

নির্বাচনে যেতে চায় বিএনপির ১১০ সাবেক এমপি

বিএনপি একদিকে অবরোধ ডেকেছে এবং এই অবরোধের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তারা ঘোষণাও দিয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এভাবে টানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা কিছু একটা অর্জন করতে চায়। বিএনপির মূলধারার নেতারা যখন এ ধরনের অবস্থান ব্যক্ত করছেন তখন নীরবে বিএনপিতে আরেকটি ধারা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।

বিভিন্ন সময়ে বিএনপির এমপি ছিলেন এ রকম অন্তত ১১০ জন এমপি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তারা আগামী নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। তারা নির্বাচনে কীভাবে যাবেন এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। খণ্ড খণ্ড ভাবে তাদের অন্তত তিনটি বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। তারা কি আলাদা একটা বিএনপি করবেন, নাকি তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করবেন, নাকি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন, এ নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চলছে। এই ১১০জন এমপির মধ্যে বর্তমান জাতীয় সংসদের থেকে পদত্যাগ করা দুজন এমপি রয়েছেন। এই দুজন এমপি বিএনপির বিভিন্ন সভা সমাবেশে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন। আবার তাদের নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতিও গ্রহণ করছেন।

শুধু এই দুজনই নন, বিভিন্ন সময় বিএনপির টিকিটে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন নির্বাচনমুখী এবং যখন বিএনপি টানা অবরোধ ডেকেছে তখন তারা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা এবং জনসংযোগ করছেন। বিএনপি এই সমস্ত নেতারা মনে করছেন যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গেলে বিএনপি অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে, বিলীন হয়ে যাবে।

বিএনপির এই ১১০জন এমপির অন্তত পাঁচ জনের সঙ্গে বাংলা ইনসাইডারের কথা হয়েছে। তারা তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারে যে যুক্তি দেখাচ্ছেন তার মধ্যে প্রধান যুক্তি হলো যে, সরকার শেষ পর্যন্ত যে কোন উপায়ে নির্বাচন করবে। আর এই নির্বাচন যদি একবার করে ফেলতে পারে তাহলে বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যাবে। কারণ এখনই বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অবলীলায় যে ভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছেন, যখন সরকার আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে তখন বিএনপিকে অস্তিত্বহীন করে তোলার জন্য কোন কার্পণ্য করবে না। ফলে টিকে থাকাটাই বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

বিএনপির এই সমস্ত সাবেক এমপিরা বলছেন যে, এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা বিষয়ে সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান রয়েছে। এখন যদি বিএনপি নির্বাচন করে এবং নির্বাচন যদি মোটামুটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে নাটকীয় ফলাফল ঘটবে। তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে গেলে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন এবং এই নির্বাচনে কোন কারচুপি হলে তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করবেন। এমনকি এই নির্বাচনে যেন কারচুপি না হয়, সেজন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করবেন। ফলে সরকারের পক্ষে কারচুপি বা যেনতেন নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং এই ধরনের নির্বাচনে গেলে বিএনপি ভালো করবে।

তৃতীয়ত, বিএনপির যারা নেতারা মনে করছেন যে, এই ধরনের আন্দোলনের বাস্তব পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেকখানি পাল্টে গেছে। বিশেষ করে এখন মানুষ জ্বালাও পোড়াও, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে না। সাবেক এমপিরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণের সমর্থন তাদের প্রতি ছিল। কিন্তু যখনই বিএনপির ধ্বংসাত্মক পথে গেছে, তখন সাধারণ মানুষও তাদের ওপর বিরক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তারা নিজেদের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকেও তাদের মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় এই এমপিরা বা আরও যারা নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, তারা কিভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d