নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারতে হারতে ম্যাচ জিতলো দ. আফ্রিকা
নেদারল্যান্ডসকে অল্প রানে আটকে দিয়ে আসল কাজটা সেরেই রেখেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। ব্যাটারদের কাজ ছিল শুধু সেই গড়ে দেওয়া ভিত্তি ওপর দাঁড়িয়ে জয়ের পথ পাড়ি দেওয়া।
কিন্তু ডাচরা সেই পথে কাঁটা বিছিয়ে দিল শুরু থেকেই। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর আরও একবার আইসিসির টুর্নামেন্টে দ. আফ্রিকাকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল তারা।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন ডেভিড মিলার ও ট্রিস্টান স্টাবস। স্বভাবসুলভ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের বিপরীতে ওয়ানডে ধাচের ব্যাটিং করে তারা কঠিন এক লড়াইয়ে দলকে জয় পাইয়ে দিয়েছেন। এই জয়ে মিলারের অবদানকে বিশেষ বলতেই হবে। কারণ বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেও শেষ পর্যন্ত দাঁত কামড়ে ক্রিজে টিকে ছিলেন তিনি। শেষে দলের প্রয়োজনে হাত খুলেছেন এবং জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ ডি-এ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ নেদারল্যান্ডসকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে মাত্র ১০৩ রান করতে পারে নেদারল্যান্ডস। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ও ৭ বল হাতে রেখে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এ নিয়ে টানা দুই জয়ে গ্রুপের শীর্ষে উঠে এলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল তারা। এক ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। সমান পয়েন্ট নিয়েও নেট রানরেটে পিছিয়ে থেকে তিনে আছে নেদারল্যান্ডস। ডাচরা অবশ্য ম্যাচ খেলেছে ২টি।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ওপেনার কুইন্টন ডিক ককের উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রিজা হ্যানড্রিকসের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফেরেন ডি কক। পরের ওভারে বিদায় নেন হ্যানড্রিকসও। তৃতীয় ওভারে অধিনায়ক এইডেন মার্করাম (০) আউট হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে তারা।
শুরুর সেই ধাক্কা আরও বড় হয় পঞ্চম ওভারে। যখন দলের আরেক বড় ব্যাটিং ভরসা হেনরিখ ক্লাসেনও ফিরে যান আউট হয়ে। ১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা দক্ষিণ আফ্রিকা তখন হারের শঙ্কায় পড়ে যায়। তবে সেখান থেকেই হাল ধরেন স্টাবস ও মিলার। দুজন মিলে গড়েন ৬৫ রানের জুটি। রান তোলার গতি কম থাকলেও তারা উইকেট পতন আটকে দেন।
দলকে ৭৭ রানে রেখে ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরেন স্টাবস। বাস ডি লিডের বলে ফন বিকের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৩৭ বলে ৩৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন স্টাবস। পুরো ইনিংসে একটি করে চার ও ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ রানের চেয়ে উইকেট ধরে রাখাই লক্ষ্য ছিল তার। তিনি বিদায় নিলেও মিলার ম্যাচ শেষ করেই আসেন।
শেষ তিন ওভারে ২৫ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় প্রোটিয়াদের সামনে। ১৮তম ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান কমান মিলার। কিন্তু ওই ওভারের পঞ্চম বলে মার্কো ইয়েনসেন (৩) আউট হলে পুরো চাপ গিয়ে পড়ে মিলারের ঘাড়ে। তবে ভড়কে যাননি মিলার। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পাল্টা আঘাত হানেন তিনি। দ্বিতীয় বলে ২ এবং চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটি তুলে নেন মিলার। এরপর পঞ্চম বলে বিশাল ছক্কায় ম্যাচ শেষ করেন তিনি। ৫১ বলে ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটার।
এর আগে নেদারল্যান্ডসকে অলআউট না করতে পারলেও হাত খুলে খেলতে দেননি প্রোটিয়া পেসাররা। নেদারল্যান্ডসের ব্যাটারদের মধ্যে বলার মতো রান করতে পেরেছেন কেবল সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখ্ট (৪৫ বলে ৪০ রান) এবং লোগান ফন বিক (২২ বলে ২৩)। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যেই।
বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বার্টমান ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান খরচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে ৪ ওভারের কোটা পূর্ণ করা বোলারদের মধ্যে তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার এটি। এই বিশ্বকাপেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নরকিয়ার ৭ রানে ৪ উইকেট তালিকার শীর্ষে আছে। দুইয়েও নরকিয়া, ২০২২ সালে সিডনিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন এই অভিজ্ঞ পেসার।
এছাড়া আজ মার্কো ইয়েনসেন ও এনরিক নরকিয়ার ঝুলিতে গেছে ২টি করে উইকেট।