পটিয়ায় ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থগিত কেন্দ্রের নির্বাচন ৫ জুন
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রের পুনঃনির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগামী ৫ জুন উপজেলায় কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার ও ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম প্রামানিক স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পটিয়া উপজেলা পরিষদের বন্ধ ঘোষিত ৩৪ নম্বর ভোটকেন্দ্রে (৩৪ নম্বর পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শাহ জাফর আউলিয়া মাজার সংলগ্ন) ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সময়সূচি নির্ধারণ করেছেন।
জানা গেছে, বুধবার (২৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিংগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্হানীয় চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের নেতৃত্বে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পরপরই ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখেন কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার।
এসময় বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট কেন্দ্রে দুই শতাধিক লোক হামলা চালিয়ে ব্যালট বইসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ, ফাঁকা গুলি ছুড়ে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন সন্ত্রাসীরা। এসময় ৯টি ব্যালট বই, ৫৫১টি ব্যালট পেপার, মার্কিং সিল ও অফিসিয়াল সিল ছিনতাই করে নিয়ে যায় বলে জানান কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শহিদুল্লাহ রায়হান।
এদিন দুপুরে ভোট কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ওইসময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, এক সঙ্গে আড়াইশ জন হামলা চলিয়েছিল কেন্দ্রটিতে। এত জনকেকে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সংশ্লিষ্টদের অবগত করে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন।
এ সময় পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দীন ভুইয়া জনী ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আরিফুল ইসলাম, পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দীনসহ বিজিবি, র্যা ব, পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৭টি কেন্দ্রের ফলাফলে তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন যুবলীগ নেতা মো. দিদারুল আলম। নির্বাচনে ৭টি ইউনিয়নে ফলাফল গড়মিল ও জোর করে ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচনের দিন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মু. হারুনুর রশিদ।
কমিশনের প্রাপ্ত ফলাফল অনুয়ায়ী, পটিয়ার চেয়ারম্যান পদে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগ নেতা মো. দিদারুল আলম পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৫৪১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আনারস প্রতীকের প্রার্থী হাজী মু. হারুনুর রশিদ পেয়েছেন ৪৬ হাজার ১৪২ভোট। এ উপজেলা মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৫ জন। তৃতীয় ধাপের এ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ২৯১ টি। যা মোট ভোটের ৩১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নির্বাচনে ভোট বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৬০৮টি।
অপরদিকে নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে যুবলীগ নেতা আবু সালেহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার শাহরু উড়োজাহাজ প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৮৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. এমদাদুল হাসান বই প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৭৩ ভোট। শাহরু এগিয়ে আছেন ৭৭৭ ভোটে। এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নারী নেত্রী মাজেদা বেগম শিরু কলস প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৮৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা বেগম প্রজাপতি প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৭৩১ ভোট। বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরু এগিয়ে আছেন ৮৩ ভোটে।