পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিয়েও প্রফেসর নারায়ণের বিরুদ্ধে তদন্ত!
২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব এবং চলতি দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত শুরু করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের গঠিত কমিটি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান উইং) প্রফেসর মো. আমির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এইচআরএম) আশেকুল হক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেলের খন্দকার আজিজুর রহমান।
জানা গেছে, প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
শুধু বাংলা ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সে এ-প্লাস পায়। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ে এ-প্লাস পাওয়ায় সামগ্রিক ফলাফল তার জিপিএ-৫ হয়। বাংলায় এ-প্লাস না পাওয়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে বোর্ডের নিয়মানুযায়ী পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। সেখানে গেলে দেখতে পান, কে বা কারা আগে থেকেই সব বিষয়ের জন্য আবেদন করে রেখেছেন। এই ঘটনায় নিজের সন্তানের জন্য শঙ্কিত হয়ে মা বনশ্রী নাথ ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পুনঃনিরীক্ষণের জন্য যে ব্যক্তি আবেদন করেছেন তা বের করতে সেই জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
পাঁচলাইশ থানার পুলিশ তদন্তে দেখা গেছে, পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনে রেফারেন্স হিসেবে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে বোর্ডের সাবেক সচিব প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল আলীমের।
জিডির ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার পর সাইবার অপরাধ আইনে একটি মামলা করেন বনশ্রী নাথ। মামলাটি এখন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম তদন্ত করছে।
২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে কর্মরত ছিলেন। নিজ সন্তান পরীক্ষার্থী হওয়ায় তিনি লিখিতভাবে পরীক্ষার সব গোপন কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি চেয়ে বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান বরাবরে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি আবেদন করেন। প্রফেসর নারায়ণের আবেদনের ভিত্তিতে তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেন একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার মুহূর্তে প্রফেসর নারায়ণকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থেকে সরিয়ে বোর্ডের সচিব পদে পদায়িত করে মন্ত্রণালয়। ফলে এইচএসসি ফলাফলের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততাই ছিল না।
বোর্ডে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে একটি ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিরাজিত নানাবিধ সংকট ও সীমাবদ্ধতা সমাধানকল্পে প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথের দক্ষ, যোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে তা সম্ভব হয়। অথচ বাইরের একটি গ্রুপ যারা আগে একসময় এই বোর্ডে বিভিন্ন মেয়াদে কর্মরত ছিলেন তারাই মূলত প্রফেসর নারায়ণের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লাগে। এই চক্রের সদস্যরা আবার বোর্ডে ফিরে আসার জন্য মরিয়া। এরাই শিক্ষা বোর্ডের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসে চিড় ধরানোর জন্যে আদাজল খেয়ে কোমড় বেঁধে নেমেছেন। এ পরিস্থিতিতে বোর্ডের সামগ্রিক অগ্রগমন বানচাল করতে চক্রটি অত্যন্ত সক্রিয়।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটা কুচক্রী মহল ক্রমাগত কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। এই কুচক্রী মহলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে গুটিকয়েক ব্যক্তি, যাদের সবাই চেনেন। সর্বশেষ ফলাফল জালিয়াতির গুজব রটানো হয়েছে। অথচ ফলাফল তৈরির কার্যক্রমে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলাম না। বিষয়টি পরিষ্কার করতে তদন্ত কমিটির কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, নারায়ণ চন্দ্র নাথের মতো একজন তারুণ্যদীপ্ত অধ্যাপক যিনি বোর্ডের সামগ্রিক কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অত্যন্ত সক্রিয়। তাঁর বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ অপতৎপরতায় লিপ্ত। এই গ্রুপের প্রত্যেককে আমি চিনি। আমি বোর্ডে থাকাকালীন এরা পদে পদে আমাকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। তারা শিক্ষা বোর্ডের ওপর যে জনআস্থা তা বিনষ্ট করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং বর্তমান সচিবকেও বানোয়াট অভিযোগে অভিযুক্ত করার সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও দুরভিসন্ধিমূলক। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করলে তাদের ষড়যন্ত্র উদঘাটন করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তৈরি করেন না। তিনি কেবল তদারকি করেন। ফলাফল তৈরির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকেন কম্পিউটার সেলে নিযুক্ত সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট এবং প্রোগ্রামার-বৃন্দ। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, বোর্ড সচিব পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত কোনো কাজেই সম্পৃক্ত থাকেন না। শিক্ষা বোর্ড আইনেও এ সংক্রান্ত কাজে সচিবের যুক্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই।