কক্সবাজারচট্টগ্রাম

পাচার হচ্ছে ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানি তেল, আসছে মাদক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির (এএ) মধ্যে তুমুল লড়াই-সংঘাত চলছে। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই চোরাচালান। বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে ভোগ্যপণ্য,ওষুধ ও জ্বালানি তেল। একই পথে মিয়ানমার থেকে ঢুকছে ইয়াবা, আইসসহ নানান রকম মাদক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম বলেন, পাচারকারীরা নানা কৌশলে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এদেশ থেকে ভোগ্য পণ্য পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এভাবে পাচারের সময় সর্বশেষ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) টেকনাফের সদর ইউনিয়নের হাতিঘোনা এলাকায় পাচারের জন্য মজুদ করা ৪ হাজার ৪৭০ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০০ কেজি ময়দা ও এক লাখ ৩৬ হাজার ৫৫০ পিস বিভিন্ন ধরনের ওষুধ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এসময় পাচারে জড়িত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, আবদুল মান্নান (২৪) ও আলী হোসেন (৪৫)। তাঁরা টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হাতিয়ার ঘোনার বাসিন্দা।

এর আগে র‌্যাব কক্সবাজার সদর ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৫ হাজার লিটার অকটেন, বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য ও ওষুধ উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তার করা হয় নয় ব্যক্তিকে।

এ ছাড়া বিজিবি, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্য উদ্ধার করা হয়েছে।

আবু সালাম চৌধুরী জানান, মিয়ানমারে এখন লড়াই চলছে। এই সময়ে ও পাচারকারীরা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ বা আইস নিয়ে আসছে।

২ বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদের পাঠানো তথ্য মতে, গত শুক্রবার টেকনাফের জিন্নাহখাল দিয়ে বাংলাদেশ ঢুকার সময় তিন লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অভিযানের সময় কাউকে আটক করা যায়নি।

এছাড়াও গত এক সপ্তাহে টেকনাফের রঙ্গিখালী এলাকা থেকে ১ কেজি ২৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস), খারাংখালী সীমান্ত থেকে দ ৬৪ হাজার ৬০০ ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। চড়ামূল্যে সেখানে নিত্যপ্রয়োনীয় মিলছে না। এই সুযোগে দুই-আড়াই মাস ধরে চোরাকারবারিরা কক্সবাজার উপকূলের অন্তত ২৫টি পথে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্য পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সীমান্তের বাসিন্দা,জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া সীমান্তে মিয়ানমারে বিজিপি ও বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের কারণে চোরাকারবারিরা টেকনাফের সমুদ্র উপকূল ও নাফ নদ দিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

আটকদের উদ্ধৃতি দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশে যুদ্ধাবস্থার কারণে দেশটিতে তেল, ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক ঘাটতি এবং দ্রব্যমূল্যের প্রচণ্ড ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। উদ্ভুত এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বাংলাদেশ থেকে কমমূল্যে ক্রয় করে চড়ামূল্যে সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে মিয়ানমারে পাচার করে আসছে কিছু চক্র। বিনিময়ে নগদ টাকার পাশাপাশি ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে নিয়ে আসছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d