পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ৭ দফা
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন সরকারের অভিযাত্রায় আমরা ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার নতুন বাঁকে দাঁড়িয়ে আছি। ২৬ বছর ধরে এই চুক্তির মূল উপাদানগুলো অনেকাংশে অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসী জনগণ এবং সারা দেশের নাগরিকদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বাংলাদেশের সকল আদিবাসীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখা এবং একই সাথে দেশের জাতীয় ঐক্যের জন্য অপরিহার্য।
তাদের দাবিগুলো হলো-
১. চুক্তি বাস্তবায়নে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা: চুক্তিটিকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থাসহ একটি সুস্পষ্ট ও কার্যকরী পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করছি।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিক তত্ত্বাবধান বন্ধ: পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত সামরিক তত্ত্বাবধান এই অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিক তৎপরতা এই অঞ্চলে চলমান সহিংসতার উৎস। আমরা অপারেশন উত্তরণ প্রত্যাহারপূর্বক সামরিক তত্ত্বাবধান স্থায়ীভাবে বন্ধ করার আহ্বান জানাই এবং এই অঞ্চলটিকে চুক্তির বিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার শাসন কাঠামো বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
৩. আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায়ন: গণতান্ত্রিক, প্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা এবং পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য চাহিদা মোকাবিলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং তিনটি জেলা পরিষদকে অবশ্যই চুক্তি অনুসারে যথাযথ ক্ষমতা প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।
৪. ভূমি অধিকার এবং পুনর্বাসন: পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভূমি অধিকারের বিষয়টি অন্যতম সমস্যা। আমরা ভারত থেকে আগত পাহাড়ি শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করার আহ্বান জানাই।
৫. অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়ন: পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে অবশ্যই দেশের মূলধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির জন্য এই অঞ্চলের অনন্য সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্যকে সম্মানপূর্বক টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা আবশ্যক।
৬. সমতলের আদিবাসীদের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ: আমরা সমতল ভূমির জেলাগুলির প্রচলিত সকল স্থানীয় সরকারে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার জোর আহ্বান জানাই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেনে সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, মানবাধিকার কর্মী মেইন থিন প্রমীলা, দীপায়ন খীসা প্রমুখ।