ফলাফল গড়মিলের অভিযোগে চবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
পরীক্ষার ফলাফলে গড়মিল, সেশন জট, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চবির নতুন কলা ও মানববিদ্য অনুষদের ডিন অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে তারা বিভাগের সভাপতি বরাবর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে একটি স্মারকলিপিও দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান যাকীয়াহ তাসনীম আমাদের ২০২০-২১ সেশনের মাস্টার্সের ফলাফল গড়মিল করেছে।
গত ১৮ আগস্ট ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা দেখলাম ৩৩ জনই ফেইল করেছে। এছাড়া মাত্র ১৭ জন শিক্ষার্থীকে ‘ফার্স্ট ক্লাস’ দেওয়া হয়েছে, বাকি সবার রেজাল্ট ‘সেকেন্ড ক্লাস’। যেটা একেবারেই কাম্য ছিল না। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছি।
তারা আরও বলেন, গত ৫ বছরের ইংরেজি বিভাগের ফলাফলের সঙ্গে কোনো পরিসংখ্যানেই এই ফলাফল মিলে না। আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন, ওখানে ৩.৫০ থেকে ৩.৮০ পর্যন্ত রেজাল্ট নিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে। এছাড়া দেশের সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের রেজাল্ট হয় ৪.০০, ৩.৫০, ৩.৮০ বা নূন্যতম ৩.০০ তথা ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে পড়ালেখা শেষ করে। শুধুমাত্র আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশনজট ও এমন ভঙ্গুর ফলাফল নিয়ে বের হতে হয়। যার ফলে বাংলাদেশের স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ব্যাংকের ফরমও সংগ্রহ করার যোগ্যতা থাকে না। তাহলে আমরা কি এটাই ধরে নিব যে, শুধু আমরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরাই মেধাহীন? আমরা এ হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।
শিক্ষার্থীদের ৭ দাবি:
বর্তমান পরীক্ষা কমিটি বাতিল করে নতুন পরীক্ষা কমিটির মাধ্যমে মাস্টার্সের রেজাল্ট পূনর্মূল্যায়ন করা এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের কারনে রেজাল্ট মেনিপুলেশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অপ্রত্যাশিত কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশে অকৃতকার্যের বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাতা মূল্যায়ন করতে হবে।
সেশনজট মুক্ত বিভাগ করতে হবে। পাশাপাশি কিভাবে সেশনজট মুক্ত করা হবে তার একটি রোডম্যাপ বা পরিকল্পনা বর্তমান সভাপতি কর্তৃক সবার সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যেখানে বিভাগের সব শিক্ষকের সাক্ষর থাকতে হবে। সেশনজটে ভুক্তভোগী সকল শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রতি ব্যাচের পরীক্ষা শেষে দুই মাসের মধ্যে রেজাল্ট পাবলিশ করতে হবে। পরবর্তী ব্যাচের ক্লাস ১৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই শুরু করতে হবে। আর যেসকল ব্যাচ এখনো পুরোনো সিস্টেমে পরীক্ষা দিচ্ছে তারা যেন বৈষম্যের শিকার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং হয়রানি করার অভিযোগে অফিস সহায়ক আবু মঞ্জুর চৌধুরীকে ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক কোনো জরিমানা কিংবা অন্য টাকা (যেটা চেয়ারম্যান ফান্ড হিসেবে পরিচিত) আদায় করা যাবেনা। থিসিস যারা নিয়েছে তাদের সবার রেজাল্ট রেগুলার ব্যাচের সঙ্গে পাবলিশ করতে হবে। বছরের পর বছর রেজাল্ট আটকে রাখা যাবেনা।
ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহ এ নূর কুদসী ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা হয়। শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগের পরীক্ষা কমিটি বাতিল করে নতুন করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অফিস সহকারী আবু মঞ্জুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগে তাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।