বঙ্গবন্ধু টানেল প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার প্রতীক
বঙ্গবন্ধুর পরে অর্থনীতি, উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় এবার বিশ্বের কাছে বিস্ময় জাগানো আরও মাইলফলক অর্জন যোগ হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর। এদিন প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন।
এটি শুধুই একটি টানেল নয়; এটি একদিকে যেমন একসময়ের ৮৮ ভাগ বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ইতিহাস সৃষ্টির সেতু, অন্যদিকে তেমনি ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাহস ও সততার উদাহরণ সৃষ্টির টানেল।
এর আগে ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেদিন লালদীঘির মাঠে নির্বাচনী সমাবেশে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্বও নিজ হাতে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন চট্টগ্রামকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্চমার্গীয় চিন্তার বহিঃপ্রকাশ দেখে অনেকে হয়তো ভেবেছিলেন— এটা নিছক রাজনৈতিক হম্বিতম্বি ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু না। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। যেই কথা সেই কাজ। একে একে তিনি সু্বশিাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামকে করেছেন অপ্রতিরোধ্য-দুর্দমনীয়। বলিহারি-দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে তিনি প্রমাণ করলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখে যা বলেন, তা কার্যকর করেন। তাঁর কথার ‘বরখেলাপ’ হয় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দূরদর্শী নেতা। কর্ণফুলী নদীর ওপর টানেল একটি নির্মাণ তাঁর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। কারণ, কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে তা শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাবে না, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। কৃষি, শিল্প, অর্থনীতি, শিক্ষা, বাণিজ্য—সব ক্ষেত্রেই এ সেতুর বিশাল ভূমিকা থাকবে। সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সের (উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য) মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে।
একটু পেছনে ফিরে তাকালেই দেখা যায়— পাকিস্তান আমলেও অবহেলিত ছিল চট্টগ্রাম। বিএনপি জোট সরকার দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখলেও কখনো জুটেনি তার প্রাপ্য মর্যাদা। তাই উন্নয়নবঞ্চিত চট্টগ্রাম অনেকটা অনাদর-অবহেলায় ধুঁকছিল দীর্ঘকাল যাবৎ। এরই মধ্যে ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধুকন্যা বীরদর্পে উন্নয়নের ঝান্ডা হাতে নিলেন। চট্টগ্রামকে সর্বাত্মকভাবে একটি আধুনিক ও উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার সেই আন্তরিক প্রচেষ্টা এখন আমুল বদলে দিয়েছে চট্টগ্রামেকে। চট্টগ্রাম নিয়ে অন্তঃকরণে কতোটা মায়া-দরদ লালন করলে এতোটা উন্নয়ন করা যায়, তা আজ দেশবাসীর কাছে ব্যাপক বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেউ কী কখনো ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিল চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে আসা-যাওয়া করা যাবে? হ্যাঁ, এমন স্বপ্ন হয়তো কেউ কেউ দেখেছেন। কিন্তু সেটা স্বপ্ন। আসলে এটা কী এখন স্বপ্ন? না, এখন স্বপ্ন নয়, সত্যি। অস্বীকার করার জো নেই যে, এই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে শুধু চট্টগ্রাম নয় পুরো দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সৃজিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার কারিশমাটিক নেতৃত্বের বদান্যতায়।
আমরা সকলে জানি— চীনের সবচেয়ে জনবহুল নগরী সাংহাই ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে পরিচিত। দেশটির এ শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রকে দু’ভাগে ভাগ করেছে চ্যাং জিয়াং নদীর উপনদী হুয়াংপু। যে নদীতে নির্মিত টানেল যুক্ত করেছে নদীর দুই পাড়কে। ফলে আজ সাংহাই সমুদ্রবন্দর বিশ্বের ব্যস্ততম ও সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দরগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। লয়েডস লিস্টের তথ্য অনুযায়ী, কনটেইনার হ্যান্ডেলিং তালিকায় বিশ্বের ১ নম্বরে রয়েছে চীনের সাংহাই বন্দর।
সাংহাইয়ের মতো ভৌগোলিক অবস্থা বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী নদীর ওপারের আনোয়ারা উপজেলার। তাই চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ উদ্যোগ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। দেশের প্রথম এই সুড়ঙ্গপথের নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’।