চট্টগ্রাম

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রেখেছে ইবির তিন ভাষ্কর্য

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১৭৫ একরের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে উজ্জীবিত রাখতে নির্মিত হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’, ‘শাশ্বত মুজিব’ ও ‘মুক্তির আহ্বান’ ম্যুরাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীদের নজড় কাড়ে এসব স্থাপনা।

নান্দনিক শিল্পকলার অনন্য নিদর্শন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সামনে তাকালেই দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত ম্যুরালটি। ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ এটি উদ্বোধন করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, এটিই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল।

ম্যুরালটির মূল পরিকল্পনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী। ম্যুরালটির নকশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আলিমুজ্জামান টুটুল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জালাল উদ্দীন তুহিনের যৌথ অর্থায়নে এটি স্থাপন করা হয়। ম্যুরালটি নির্মাণ খরচ প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। শৈল্পিক কারুকার্যের রূপ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক। খোদাই করা পাথর ও টাইলসের তৈরি ম্যুরালটির মূল স্থাপনার দৈর্ঘ্য সিঁড়িসহ ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮ ফুট। বেদির উচ্চতা ৫ ফুট। বেদির ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দৈর্ঘ্য ২৬ ফুট এবং প্রস্থ ১৭ ফুট। এর তিনটি সিঁড়ি রয়েছে। সিড়িগুলো উন্নতমানের সিরামিক দ্বারা সুসজ্জিত করা। স্থাপনার তিন দিকে দর্শনার্থীদের চলাফেরার জন্য দুই স্তরের ১৫ ফুট চওড়া জায়গা রয়েছে। মূল বেদির উপর আড়াই ফুট উচ্চতা এবং ২০ ফুট চওড়া একটি দেয়াল স্থাপন করা হয়েছে। মূল প্রতিকৃতির ডান পাশে ৪ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট উচ্চতার একটি ওয়াল রয়েছে। যাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা একটি ইংরেজি বাণী লিপিবদ্ধ করা আছে। এই বাণীর ঠিক নিচেই রয়েছে বাংলায় অনুবাদ। যাতে লেখা ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়ে ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তা আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তন সম্পত্তির উৎস ভালোবাসা। অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

‘মুক্তির আহ্বান’ ও ‘শাশ্বত মুজিব’ ম্যুরাল

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু হলের সম্মুখে দুটি ম্যুরাল উদ্বোধন করা হয়। ম্যুরালগুলোর একটি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবি সংবলিত ‘মুক্তির আহ্বান’ আর অন্যটি মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে নির্মিত ‘শাশ্বত মুজিব’। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ম্যুরাল স্থাপনের নিমিত্তে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে হলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন প্রভোস্ট অধ্যাপক তপন কুমার জোয়াদ্দার। অন্যদিকে স্বাক্ষর করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক। প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ম্যুরাল দুটি।

৯ ফুট উচ্চতা ও ১৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট ‘মুক্তির আহ্বান’ ম্যুরালটি দাঁড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাস নিয়ে। এতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সাদা পাথরে লেখা আছে। তার পাশেই রয়েছে ৭ মার্চের ভাষণের আদলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি।

‘মুক্তির আহ্বান‘ ম্যুরালের ঠিক বিপরীত দিকে নির্মিত হয়েছে ‘শ্বাশত মুজিব’ ম্যুরাল। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু হলের ফটকের দুই পাশে দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। সাড়ে ১০ ফুট উচ্চতা ও ৭ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট ‘শ্বাশত মুজিব’ ম্যুরালটিও দাঁড়িয়ে আছে বাঙালি জীবনের আলোর দিশারী হিসেবে। ম্যুরালের দুপাশেই রয়েছে খোদাইকৃত দুটি অমিয় বাণী। এ চিত্রকর্মটি বিভিন্ন রঙের মূল্যবান পাথর দ্বারা অসাধারণ কারুকার্যে খোদাই করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর এই স্মৃতি ভাষ্কর্যগুলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ হন এসব ভাষ্কর্যের নান্দনিক সৌন্দর্য দেখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d