বন্যার্ত ২৬ হাজার মানুষের পাশে আল মানাহিল
নগরের ভিআইপি টাওয়ারের নিচের বিশাল খোলা জায়গায় চলছে বিভিন্ন খাদ্য পণ্য প্যাকেট করার প্রক্রিয়া। সেখানে দলবেঁধে স্বেচ্ছাসেবীরা বস্তায় ভরছেন চাল-ডাল-চিনি-লবণ-তেল-বিস্কুট-মসলার গুঁড়া।
স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ‘আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর নেওয়া কর্মযজ্ঞের দৃশ্য এটি।
আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আছেন ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন তিনি বলেন, বন্যা শুরু হলে আমাদের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন মহোদয় জরুরি বৈঠকের ডাক দেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা ফেনীতে গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে দিই। আমরা বেশ কিছু নৌকা নিয়ে যাই। সেগুলোর সহায়তায় আমরা ছয়শর ওপর মানুষকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই।
উদ্ধার কার্যক্রম শেষে বন্যা দুর্গত ফেনী, মীরসরাই ও ফটিকছড়ি এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা শুরু করে আল মানাহিল। ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন বলেন, শুরুতে আমরা প্রায় ১৬ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করি। সেখানে মুড়ি-চিড়া-বিস্কুটসহ নানা খাবারের পাশাপাশি পানি ও স্যালাইন ছিল। ’
এখন ১০ হাজার পরিবারের জন্য প্রায় দুই সপ্তাহের খাবারের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্যাকেটগুলোকে তাঁরা দুই ভাগে ভাগ করেছেন। বড় পরিবারের জন্য ৩৫ কেজির প্যাকেট এবং ছোট পরিবারের জন্য ১৯-২০ কেজির প্যাকেট করা হচ্ছে। মানাহিলের স্বেচ্ছাসেবকরো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে একটি দল খাবার প্যাকেট তৈরি ও আরেকটি দল বন্যা দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বাছাই করছেন। তাদের জরিপ অনুযায়ী বড় পরিবারের হাতে বড় প্যাকেট এবং ছোট পরিবারের কাছে ছোট প্যাকেটগুলো সরবরাহ করা হবে।
ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন বলেন, ‘বড় প্যাকেটে ২৫ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল, ২ কেজি তেল, ২ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, বিস্কিট, পানি ও এক প্যাকেট স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। আর ছোট প্যাকেটে ১০ কেজি চালসহ ডাল, তেল, চিনি, লবণ, বিস্কিট, পানি ও স্যালাইনের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। শিগগির এসব খাবার পরিবারগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হবে। খাবার সরবরাহ শেষে আমাদের ইচ্ছে আছে আল্লাহ সহায় হলে এক হাজার পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার। ’
আল মানাহিলের অন্যতম পরিচালক মহিউদ্দিন বলেন, ‘বন্যার কারনে চারপাশে শুধু পানি আর পানি ছিল। পানির নিচে কোথায় কি আছে তা দেখা যাচ্ছিল না। এ কারণে আমাদের বহনকারী নৌকাটি একটা সীমানাপ্রাচীরে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে বলতে গেলে দুই টুকরো হয়ে যায়। অনেক জায়গায় ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। তবে আমরা মনোবল হারাইনি। কেউ ভেঙে যাওয়া অংশ জোড়া লাগানোর চেষ্টা করি। আবার কেউ পা দিয়ে, হাত দিয়ে ছিদ্রগুলো ভরাট করার চেষ্টা করি। তারপর কোনোমতে জীবন নিয়ে নিরাপদ জায়গায় ফিরি। নৌকাটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমরা মালিককে নতুন করে নৌকা বানিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ’
আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কর্মযজ্ঞের বেশিরভাগই আসে ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মানুষও এই ফাউন্ডেশনের মানবিক কাজে পাশে দাঁড়ান।