বাংলা সংগীতের প্লেব্যাক সম্রাটের আজ জন্মদিন
বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে গেয়েছেন কয়েক হাজার গান। তার মধ্যে জনপ্রিয় গানের সংখ্যা যে কত, তা গুনে শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশে তার কণ্ঠ নিঃসৃত গান শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। সিনেমার গানে তো তিনি অদ্বিতীয়। সেজন্যই তাকে বলা হয় বাংলা সিনেমার ‘প্লেব্যাক সম্রাট’। তিনি হলেন কিংবদন্তি এন্ড্রু কিশোর। আজ (০৪ নভেম্বর) বাংলা চলচ্চিত্রের সেই ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ খ্যাত এন্ড্রু কিশোরের ৬৮তম জন্মদিন ।
১৯৫৫ সালের ৪ই নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এ সুর সম্রাট। তার পুরো নাম এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। তিনি ছয় বছর বয়স থেকে সংগীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। তার বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মা মিনু বাড়ৈ। মা ছিলেন সংগীতানুরাগী, কিশোর কুমারের ভক্ত। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন ‘কিশোর’। বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে গেয়েছেন কয়েক হাজার গান। সিনেমার গানে তো তিনি অদ্বিতীয়। সেজন্যই তাকে বলা হয় বাংলা সিনেমার ‘প্লেব্যাক সম্রাট’।
রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া কিশোর বেড়ে ওঠেন সেখানেই। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর। আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতে পাঠ গ্রহণ শুরু করেন এ কিংবদন্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।
মূলত সিনেমার গানের শিল্পী হিসেবে কালজয়ী হন এন্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্রে যেমন জুটি প্রথা থাকে নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে এন্ড্রু কিশোর তেমনি জুটিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন গানের ভুবনে। চলচ্চিত্রে এন্ড্রু কিশোর-রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর-সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর-কনক চাঁপা, এন্ড্রু কিশোর-মিতালি মুখার্জী, এন্ড্রু কিশোর-শাকিলা জাফর, এন্ড্রু কিশোর-রিজিয়া পারভীন, এন্ড্রু কিশোর-বেবী নাজনীন, এন্ড্রু কিশোর-সালমা জাহান এভাবে অনেক জুটি তৈরি হয়েছিল। এন্ড্রু কিশোর একমাত্র কণ্ঠশিল্পী যিনি রাজ্জাক থেকে শুরু করে হালের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান পর্যন্ত সবার লিপে গান করেছেন ধারাবাহিকভাবে। অন্যান্য শিল্পীরা সব শীর্ষ নায়কের লিপে গান করেননি যেটা এন্ড্রু কিশোর করেছেন।
এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিযে। তবে শ্রোতামহলে তার কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ে ১৯৭৯ সালের ‘প্রতিজ্ঞা’ সিনেমার ‘এক চোর যায় চলে’ গানের মাধ্যমে। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘সবাইতো ভালোবাসা চায়’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, এমন অসংখ্য কাল জয়ী গান গেয়েছেন সুর সম্রাট।
ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক। গান গেয়ে তিনি আকাশছোঁয়া খ্যাতি পেয়েছেন। সেই সঙ্গে জিতেছেন বহু পুরস্কারও। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার ও দুইবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
২০২০ সালের ৬ জুলাই তার মৃত্যু হয়। তবে অসংখ্য শ্রোতার প্রিয় গায়ক হিসেবে এখনো ফিরে ফিরে আসেন এন্ড্রু কিশোর। সলো অথবা ডুয়েট সবক্ষেত্রে তিনি রাজত্ব করেছেন নিজের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কণ্ঠ দিয়ে। এভাবেই তিনি প্লেব্যাক সম্রাট হয়ে ওঠেন, হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের বেতাজ বাদশা। এজন্যই তিনি অমর হয়ে থাকবেন। তার প্রতি শ্রোতাদের ভালোবাসা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।