দেশজুড়ে

বাইকের জন্য বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যা

মাগুরায় তীর্থ রুদ্র (১৮) নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তায়হান ইসলাম আমান (২১) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির বাড়ি থেকে নিহত ব্যক্তির ব্যবহৃত মুঠোফোন ও মোটরসাইকেলের চাবি এবং এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে।

তায়হান ইসলাম আমান মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে তার পরিবারের কাছে একটি বাইক কিনে দেওয়ার দাবি করে আসছিলেন। আমানের পরিবার বাইক কিনে না দেওয়ায় সুকৌশলে বন্ধু তীর্থ রুদ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাইকটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পরিকল্পিতভাবে প্যাথেডিন ইনজেকশন পুশ করে বন্ধু তীর্থ রুদ্রকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।

এঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশে উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিস হাসান বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে রুদ্রের বাড়িতে রুমের দরজা বন্ধ করে আমান ও তীর্থ বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। পরে সন্ধ্যার দিকে তীর্থকে বাড়িতে ঢেকে নিয়ে ইটখোলা বাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকানে দুইজন চা পান করেন আমান। তারপর দুই বন্ধু মোটরসাইকেলযোগে ইয়াবা খাওয়ার উদ্দেশ্যে দোয়ারপাড় আল আমিন এমতি খানার পুকুর পাড়ে আসেন।

এসময় আমান তীর্থকে বলে তুই একটি ঘুরে দাড়া আমি ইয়াবা প্রস্তুত করছি। পরে তীর্থ ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে আমান প্যাথেডিন ইনজেকশন তীর্থের শরীরে পুশ করে দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তীর্থ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আমানের কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তীর্থের গলায় এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তীর্থের মৃত্যু হলে তীর্থের বাইকটি নিয়ে পালিয়ে যান বন্ধু আমান। পরে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুরে সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, তায়হানকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার বাসা থেকে নিহত তরুণের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চাবি ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। পরে পৌরসভার কাশিনাথপুর এলাকায় অভিযুক্তের খালার বাড়ি থেকে নিহত তীর্থ রুদ্রর মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওসি আরও জানান, মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট খুলে শহরের মোল্লা পাড়া এলাকায় একটি দোকানের ওপরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেটাও উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের ধারণা, এই ছেলেটিই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। এ ঘটনা কেন ঘটেছে বা আরও কেউ এর সঙ্গে জড়িত আছে কি না, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এদিকে তীর্থ রুদ্রের বাবা নিমাই রুদ্র বলেন, একটি বাইকের লোভে বন্ধুকে যে হত্যা করতে পারে সেই বন্ধু নামের কলঙ্ক। আমার ছেলেটিকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

প্রসঙ্গ, সোমবার (১ জুলাই) রাতে শহরের পুরাতন বাজার এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মটরসাইকেল নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে যায় রুদ্র। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তার। তীর্থ রুদ্রের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রুদ্রের অবস্থান জানার চেষ্টা করে পুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার সকালে শহরের দরি মাগুরার এলাকার একটি পুকুর পাড় থেকে তীর্থ রুদ্রের মরদেহ উদ্ধার হয়। তীর্থ রুদ্র মাগুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d