জাতীয়

বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ঢাকা: আবারও সারাদেশে বিএনপি রেল, সড়ক ও নৌপথে দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।একই সঙ্গে বিএনপির শরীক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়।

এ কর্মসূচি ঘিরে নাশকতা এড়াতে ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো।
রোববার (০৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে। বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধে সারাদেশের সড়ক, নৌপথ ও রেলপথে যান চলাচল বন্ধের কথা বলা হয়।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের আগেই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর চার স্থানে চারটি বাসে চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সিটি সেন্টারের সামনে সামনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির একটি বাসে, নিউমার্কেটের গাউছিয়া মার্কেটের সামনে মিরপুর লিংক পরিবহনের একটি বাসে, সায়দাবাদ জনপথ মোড় ফ্লাইওভারের নিচে একটি বাসে এবং গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের সামনে মঞ্জিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

অপরদিকে, অবরোধে ঢাকায় গণপরিবহন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক গোলাম সামদানী বলেন, আগের মতই গাড়ি চলাচল করবে। অবরোধে কোনো গাড়ি বন্ধ থাকবে না। তবে যাত্রীর ওপর নির্ভর করবে লঞ্চ চলাচল। তবে বন্ধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী।

এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির নামে রাজধানীসহ সারাদেশেই চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব কিছু মাথায় রেখেই রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। যেকেনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গাতে টহল শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

র‍্যাব-পুলিশসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করতে ও কড়া নজরদারিতে মোতায়েন থাকবে। এদিকে র‌্যাব-পুলিশের সাইবার ইউনিট যেকোনো ধরনের গুজব প্রতিহত করতে সাইবার স্পেসে নজরদারি করছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের সিসিটিভি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। অবরোধের আগের রাতেই চোরাগোপ্তা হামলা করছে দুর্বৃত্তরা। অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে সারাদেশে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, অবরোধের নামে কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা বা জনগণের জানমালের ক্ষতি করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

রাজধানীসহ সারাদেশেই পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাবের সবগুলো ব্যাটালিয়ন রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ পুরো নগরীতেই রাখা হবে র‌্যাবের চেকপোস্ট, টহল টিম ও পেট্রোলিং। গুজব প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে সাইবার স্পেসে চলছে নজরদারি। কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য র‌্যাবের সাইবার ইউনিট তৎপর রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের স্পেশাল টিম ও স্টাইকিং ফোর্স রিজার্ভ থাকবে। যেকোনো নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র‌্যাব সার্বক্ষণিক দেশব্যাপী নিয়োজিত থাকবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাব।

তিনি বলেন, দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ফোর্সেসের ১৫টি ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারী কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d