চট্টগ্রাম

ব্যাংকে স্ত্রীর নামে কোটি টাকা, জেলার সোহেল রানার দুর্নীতির নতুন প্রমাণ

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জেলার (কারাধ্যক্ষ) সোহেল রানা বিশ্বাসের স্ত্রী হোসনে আরা পপির ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে যে, এই অর্থ সোহেল রানা ঘুষ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন।

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রেনে সোহেল রানা বিশ্বাসকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও মাদকসহ আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। তাঁর দুটি ব্যাগ তল্লাশি করে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচটি চেকবই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং ১২ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়।

এই ঘটনায় সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে তাঁকে কারা কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। এরপর দুদক সোহেলের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করে এবং ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে। দুদকের করা এই মামলাটি ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

দুদকের মতে, সোহেল রানা বিশ্বাসের স্ত্রী হোসনে আরা নিজেকে মৎস্যচাষি হিসেবে দাবি করলেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সোহেল রানা তার অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ করার উদ্দেশ্যে তার স্ত্রীকে মৎস্য খামারি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

সাড়ে পাঁচ বছর আগে সোহেল রানা টাকা এবং মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুদক তার সম্পদের তদন্ত শুরু করে। ২০২২ সালের ৩০ জুন তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করে। দুই বছরের তদন্তের পর, দুদক তার স্ত্রী হোসনে আরার নামে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পায়।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, হোসনে আরা নেত্রকোনার পূর্বধলায় মো. দেলোয়ারের কাছ থেকে ৩০৪ শতাংশ জমি মৎস্য চাষের জন্য ইজারা নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তাদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু, এই তিনটি স্ট্যাম্প আসলে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে রাজু আহমেদ (লাইসেন্স নম্বর ৬৩১/১২) নামের একজন বিক্রেতার কাছে বিতরণ করা হয়েছিল।

সুতরাং, ২০১১ সালে এই স্ট্যাম্পগুলি ব্যবহার করার কোনো সুযোগ ছিল না। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হোসনে আরা ২০১৭ সালের স্ট্যাম্পগুলিকে ২০১১ সালের বলে মিথ্যা দাবি করে একটি ভুয়া চুক্তি তৈরি করেছেন এবং সেটি ব্যবহার করেছেন।

সোহেল রানা ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার স্ত্রীর একটি মৎস্য খামার আছে এবং তিনি একটা ষড়যন্ত্রের শিকার।

তবে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এনামুল হক জানিয়েছেন, সোহেল তার ঘুষের টাকা বৈধ করার জন্য তার স্ত্রীকে মৎস্য খামারি হিসেবে পরিচয় দিলেও এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ময়মনসিংহের তিনটি ব্যাংকের শাখায় হোসনে আরার নামে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।

এই বিষয়ে শীঘ্রই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে জানান দুদকের চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d