মহানবী সা. শীতকালে যেসব যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন
মহানবী সা. শীতকালে যেসব যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন
মুসলমানদের অব্যাহত উন্নতি ও ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রসার দেখে বদর যুদ্ধে পরাজিত ও ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যস্ত মুশরিক ও অন্যান্য অমুসলিম সম্প্রদায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।
মুসলামানদের বিরুদ্ধে মুশরিক, ইহুদি ও খৃস্টানদের একটি সম্মিলিত শক্তি জোট গড়ে তুললো। তারা সবাই মিলে মদিনায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিল। একইসঙ্গে বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে পৃথিবীর বুক থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার সংকল্প নিয়ে মদিনার চারদিক অবরোধ করে বসলো।
কোরআনে এ যুদ্ধকে গযওয়ায়ে আহযাব অর্থাৎ সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধ এবং ইতিহাসে গযওয়ায়ে খন্দক নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামের শত্রুদের যুদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা জেনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে স্থির করেছিলেন যে, শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে মদিনার বাইরে পরিখা খনন করা হবে। যাতে তারা পরিখা ডিঙিয়ে মদিনায় প্রবেশ করে হামলা চালাতে না পারে।
মুসলমানদের প্রস্তুতি
বায়হাকী, আবু নাঈম ও ইবনে খুযায়মার রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, প্রতি চল্লিশ হাত পরিখা খননের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দশজন করে সাহাবির ওপর। পরিকল্পনা ছিল- কয়েক মাইল লম্বা যথেষ্ট গভীর ও প্রশস্ত পরিখা খনন করতে হবে, যা শত্রু সৈন্যরা সহজেই পার হতে না পারে। পরিখা খননের কাজ কাজ খুব দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন ছিল।
সাহাবিরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে লাগলেন। পানাহার, ইস্তিঞ্জার মতো প্রয়োজনগুলোতেও কাজ বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে কাজ করেছিলেন তারা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এই কাজে একজন সাধারণ সৈনিকের মতো অংশ নিয়েছিলেন। এভাবে সবাই সম্মিলিতভাবে খনন কাজ শেষ করলেন।
মুসলমানদের কৌশলে হতবাক কুরাইশ!
যুদ্ধের প্রস্তুতি শেষে কুরাইশরা মদিনার উপকণ্ঠে ছাউনি ফেললো। তারা মদিনার প্রবেশ মুখে খন্দক দেখে হতবাক হয়ে গেল। নিজেদের ভেতর বলাবলি করতে লাগলো, মুসলমানরা আমাদের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে, আমরা এই বিষয়ে একেবারে অজ্ঞ। সরাসরি খন্দক পার হয়ে যুদ্ধে করতে না পারায় মুশরিকরা মদিনা অবরুদ্ধ করে রাখে। এক মাস অব্যাহত ছিল তাদের অবরোধ। দীর্ঘ অবরোধের কারণে মুসলমানদের ব্যাপক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
প্রচণ্ড শীত-বৃষ্টি
এ সময় আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের সাহায্য করলেন। কাফির মুশরিক বাহিনীর ওপর শীতের রাতে এমন প্রবল শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলো যে, তাদের তাবুগুলো উপড়ে গেল, খাবার রাখার ডেকচিগুলো উল্টে গেল।
তখন যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান বললেন, ‘এখন আর এখানে অবস্থান করার মতো পরিস্থিতি নেই। আামদের খচ্চর ও ঘোড়াগুলো শেষ হয়ে গেছে। যারা আমাদেরকে এই যুদ্ধে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল তারাও প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাচ্ছে। এই প্রবল শৈত্যপ্রবাহে কেয়ামতের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগুন জ্বালাতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনো অব্স্থান ও আশ্রয়স্থল নিরাপদ ও অক্ষত নেই। এখন এখান থেকে বেরিয়ে পড়’।
একথা বলে আবু সুফিয়ান নিজের উটের পিঠে চেড়ে বসলেন। এসময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়ছিলেন।
মহানবী সা. বললেন…
শত্রু বাহিনীর অবস্থা গোপনে জানতে হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা নামের এক সাহাবিকে শত্রু বাহিনীর ভেতর গোয়েন্দাগিরির দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম। তিনি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুরো পরিস্থিতি জানালেন।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এ বছরের পর কুরাইশরা আর কখনো তোমাদের ওপর আক্রমন করে না বরং তোমরাই তাদের ওপর হামলা করবে’।
কোরআনে খন্দক যুদ্ধে
এই যুদ্ধে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوۡا نِعۡمَۃَ اللّٰهِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ جَآءَتۡکُمۡ جُنُوۡدٌ فَاَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمۡ رِیۡحًا وَّ جُنُوۡدًا لَّمۡ تَرَوۡهَا ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرً
হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল। অতঃপর আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঘূর্ণিবায়ু এবং এমন বাহিনী যা তোমরা দেখনি। আর তোমরা যা কর আল্লাহ্ তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আহযাব, (৩৩), আয়াত, ৯)
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ رَدَّ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِغَیۡظِهِمۡ لَمۡ یَنَالُوۡا خَیۡرًا ؕ وَ کَفَی اللّٰهُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الۡقِتَالَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ قَوِیًّا عَزِیۡزًا
আল্লাহ কাফিরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করলেন। তারা কোন কল্যাণ লাভ করেনি। আর যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; এবং আল্লাহ সর্বশক্তিমান, প্রবল পরাক্রমশালী। (সূরা আহযাব, (৩৩), আয়াত, ২৫)
(নবীয়ে রহমত, ২৬৫,২৭৬)