মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কি অকেজো অস্ত্র
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের ঘুম নেই। এ বছর অন্তত এক ডজন বিভিন্ন স্তরের মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন। সবশেষ সফর করে গেলেন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার। যাওয়ার সময় তিনি বলে গেছেন, আগামী তিন মাস বাংলাদেশের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। আফরিনের সফরের আগেই এসেছিল বিশাল বহরের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। তারা ওয়াশিংটন ফিরে গিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশও দিয়েছিল। এ সুপারিশে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান দুই দলের সংলাপের ওপর। সংলাপের ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি যার যার অবস্থানে অনড়। আওয়ামী লীগ বলেছে, সংলাপ হতে হবে শর্তহীন। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নীতিগত মেনে নিয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেই শুধু সংলাপ হতে পারে। এর মধ্যে বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আবার সমাবেশ ডেকেছে। এখন আন্দোলনে চলছে ‘পূজার ছুটি’। ছুটির পর আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’র ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘এটা হবে বিএনপির মরণযাত্রা।’ দেশে নির্বাচনের ১০০ দিনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, শেখ হাসিনার অধীনেই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। বিএনপি বলেছে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেওয়া হবে না। দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রাজনীতিতে অশনিসংকেত। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়েই যাচ্ছে। বিএনপি মার্কিন চাপকে এখন প্রকাশ্যেই স্বাগত জানায়। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য বিদেশি বন্ধুদের আগ্রহ আমাদের সাহস জোগায়।’ বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই সরকারের পতন হবে। একতরফা নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না। তারা নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সরকারকে নাস্তানাবুদ করবে। মার্কিন ভূমিকার কারণেই বিএনপি এবার অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানারকম হুমকি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে অনেক হৈচৈ হচ্ছে। গত ২৮ মে বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করে, বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর শুরু হয়েছে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব। কারা কারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলো, এ নিয়ে চলছে মাতামাতি। আগে গুজব ছড়ানো হতো বিদেশ থেকে। এখন দেশে বসেই জ্যোতিষীর মতো একশ্রেণির বিরল প্রজাতির বুদ্ধিজীবী গুজব ছড়াচ্ছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছেন অনেকে। আফরিন আখতার শেখ হাসিনাকে কত তারিখের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলেছেন— সেই এক্সক্লুসিভ তথ্য ফাঁস করে কেউ কেউ আলোচনার পাদপ্রদীপে। মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কবে আসবে তার দিনক্ষণ ঘোষণাকারীর সংখ্যা এখন বাংলাদেশে কম না। যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে কীভাবে নাকানিচুবানি খাওয়াবে অথবা টেনেহিঁচড়ে নামাবে, তার ফর্দ এখন অনেক সুশীলের বুকপকেটে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে কি না হয়, এমন কথা আজ হাটেবাজারে আলোচনা হয়। কিন্তু এই যে মার্কিনি হুমকি, নিষেধাজ্ঞার চাপ ইত্যাদি সরকার কিংবা আওয়ামী লীগকে এতটুকু বিচলিত করেছে বলে মনে হয় না। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক মাস আগে যখন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন, তখন সরকারের মধ্যে কিছুটা হলেও চাঞ্চল্য লক্ষ করা গিয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশ এবং প্রশাসনের মধ্যে একটু হলেও অস্বস্তি লক্ষ করা যায়। তবে এই আতঙ্ক ক্রমেই আড্ডার ঝালমুড়ির মতো মুখরোচক বিষয়ে পরিণত হয়। সামনে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়েও সরকারের মধ্যে কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হয় না। এর কারণ বিশ্বজুড়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ক্রমেই অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশগুলো বাঁচার নিজস্ব কৌশল রপ্ত করেছে দ্রুত।
বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক আকারে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, কিউবা, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলার ওপর। দেশভেদে এসব নিষেধাজ্ঞার প্রকৃতি আলাদা। এসব দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠান কোনোরকম লেনদেন বা বাণিজ্য করে না। এমনকি অন্য দেশগুলো যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এ দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারে না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব দেশ বিশেষ করে ইরান বা ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি একপ্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এ নিষেধাজ্ঞাকে ভালোই সামাল দিয়েছে দেশগুলো।
ইরানের কথাই ধরা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমাতে ইরান সবসময় চেষ্টা করেছে বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন একটি বলয় তৈরি করতে। আর এ উদ্যোগে ইরান সবসময় পাশে পেয়েছে চীন এবং রাশিয়াকে। এ ছাড়া আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমেও চেষ্টা চালিয়ে গেছে। ইরানের তেল আয়ের সিংহভাগ চীন থেকে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র চীনকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার পরিকল্পনা করে। কিন্তু চীন আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ইরানি অপরিশোধিত তেল আমদানির ঘোষণা দেয়। নিজ দেশেই অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করছে ইরান। এর ফলে অন্যান্য দেশের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমে গেছে। অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যের ঘাটতি থাকায় দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়েছে। আর এভাবেই ইরানিদের জন্য আরও কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এত অবরোধের পরেও অনেক ক্ষেত্রেই এসব অবরোধের প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ডলার সংকট এড়াতে ইরান নিজেদের বাণিজ্যিক রপ্তানি খাতসহ পর্যটন শিল্প এবং শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এখানে তারা সফলতার মুখও দেখেছে। বিপর্যস্ত অর্থনীতি থেকে ইরান ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
কিউবার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধের ছয় দশক পেরিয়ে গেছে। আর এত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে লাতিন আমেরিকার এ দেশটি। দীর্ঘ অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার পর ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রই কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়। ২০১৫ সালের দিকে আমেরিকা-কিউবা দুই দেশের দূতাবাসের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও জটিল রাজনৈতিক ইতিহাসকে সরিয়ে রেখে আগামী দিনে নতুন মৈত্রীর রূপরেখা তৈরির অঙ্গীকারও করে দুই দেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান রাউল কাস্ত্রো ও বারাক ওবামা। এটিও কিউবার জয়। ছয় দশক ধরে মার্কিন ও তার মিত্রদের অবরোধের মধ্যে থাকা কিউবার সংকট যতটা বেশি থাকার কথা, ততটা কিন্তু নেই। অনেক সংকটের মধ্যেও কিউবা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, মানবিক ও সামাজিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটিয়েছে। বিশ্বের ২০০ দেশের মধ্যে মানবিক উন্নয়নে তাদের অবস্থান ৭০তম।
ভেনেজুয়েলার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে মার্কিন সরকার চেয়েছিল ভেনেজুয়েলার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে। কিন্তু প্রায় প্রতিটি আরববিশ্বের বুকে খনিজ তেলের বড় বড় মজুত থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেলের মজুতটি ভেনেজুয়েলার। যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি বিভাগের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেলের মজুত আছে ভেনেজুয়েলায়। পরিমাণের দিক দিয়ে তা ৩ লাখ ৮৭৮ মিলিয়ন ব্যারেল। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর সংকটপূর্ণ এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে আগ্রহী হয়। তেলসম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির ওপর বাইডেন প্রশাসন নিজের স্বার্থেই আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাগুলো কিছুটা শিথিল করে। কিন্তু ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা না রাখতে পেরে বন্ধু হিসেবে চীনকেই বেছে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রয়োজনেই এখন ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছে। এরই মধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দুই দেশ ইরান ও ভেনেজুয়েলা নিজেদের মধ্যে ২০ বছরের একটি সহায়তা চুক্তি করেছে। জ্বালানি তেল, প্রতিরক্ষা, কৃষি, পর্যটন, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি খাতে সহায়তার বিষয় উল্লেখ করা হয় চুক্তিতে। নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থাকলেও ক্রমেই তা কাটিয়ে উঠছে দেশটি।
বাংলাদেশে যেমন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সজাগ, ঠিক তেমনি অবস্থান নিয়েছিল নাইজেরিয়ার নির্বাচন নিয়েও। নাইজেরিয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের ভয় দেখানো, নির্বাচনের ফলাফল কারচুপি ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলেও নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালে ভিসা নিষেধাজ্ঞার পরও ২০২৩ সালে দেশটি নির্বাচন হয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা আইনের রায় অর্থনীতির গায়ে আঁচড়ও লাগাতে পারেনি। প্রায় একইরকম ঘটনা কম্বোডিয়াতেও। সেখানেও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্বাচন হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রই কম্বোডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ খুঁজছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বে মার্কিন প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে। রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা। কিন্তু এতে রাশিয়া বিপর্যস্ত হয়নি বরং আবার স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে নিয়ে গেছে বিশ্বকে।
পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল বেশ নাটকীয়ভাবে শক্তি ফিরে পেয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়া ডিজিটাল রুবলের মুদ্রার বিকাশকে ত্বরান্বিত করাতে উদ্যোগী হয়েছে। ডিজিটাল মুদ্রার উদ্যোগটি বিশ্বব্যাপী অন্যান্য ২০টি দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যারা এরই মধ্যে পাইলট ডিজিটাল মুদ্রা প্রোগ্রাম শুরু করেছে। ডিজিটাল রুবল আনার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার আর্থিক নমনীয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাসহ আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের প্রভাব কমানো। এ ছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরোপের দেশগুলো যে গ্যাস ও তেল ক্রয় করে, সেটির মূল্য পরিশোধ করা হতো ইউরোতে। রাশিয়ার সঙ্গে এটাই ছিল তাদের চুক্তি। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া বলেছে যে, তাদের কাছ থেকে যারা তেল-গ্যাস ক্রয় করবে, সেটির মূল্য পরিশোধ করতে হবে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে। ব্লুমবার্গ বলেছে, এ কারণে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল শক্তিশালী হয়েছে। তা ছাড়া চীন এবং ভারতের কাছে জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে রাশিয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে।
তবে সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে আফগানিস্তান। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে রীতিমতো পালিয়ে বাঁচে যুক্তরাষ্ট্র। কট্টর তালেবান শাসন কায়েম হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্র চরম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির ওপর। আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বীকৃতি দিয়েছে তালেবানদের। তবে চীন, রাশিয়া, মিয়ানমার, কাতার, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়ার মতো দেশ তালেবান সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখছে। এখন এক ডলারে ৭৫ আফগানি মুদ্রা পাওয়া যায়। আফগানি এখন বাংলাদেশের তো বটেই, ভারতের রুপির চেয়েও শক্তিশালী। আফগানিস্তানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এক অচল অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি নতুন করে শুরু হয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ইসরায়েলের বর্বরতা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করেছে। বিশেষ করে গাজায় হাসপাতালে হামলা, নির্বিচারে নারী-শিশুদের হত্যা বিশ্ব বিবেককে করেছে স্তব্ধ। ইসরায়েলের এ ঘৃণ্য জঘন্যতম নারকীয় তাণ্ডবকে শর্তহীনভাবে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কতিপয় মিত্র। মার্কিন এ পক্ষপাতপূর্ণ আচরণকে ধিক্কার দিচ্ছে দলমত নির্বিশেষে বিশ্বের সব শান্তিপূর্ণ নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় বিশ্বের অভিভাবক। কিন্তু অভিভাবক যদি হন পক্ষপাতপূর্ণ, নিজ স্বার্থে অন্ধ এবং নৃশংস তখন তিনি আর অভিভাবক থাকেন না। তাকে চ্যালেঞ্জ জানায় সবাই। এখন বিশ্বে সেই প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ধীরে ধীরে মার্কিন সূর্য অস্তমিত হচ্ছে। সৌদি আরব আগের মতো মার্কিন কথায় চলছে না। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। ইসরায়েলের ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে মুসলিমবিশ্ব। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য বড় হুমকি। যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্ব মেরূকরণে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। মার্কিনিদের হুমকিতে ভয় পাওয়া দেশের সংখ্যা কমছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কি পারবে বাংলাদেশকে ‘পোষা বিড়াল’ বানাতে?
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত