রাজনীতি

‘মাস্টারমাইন্ড’ তারেক জিয়া

২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে কি হয়েছিল? বিএনপির জনসমাগম ভালোই হয়েছিল। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিল ঠিকঠাক মতই। হঠাৎ কি হল? বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সাথে কথা বলে এনিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সমাবেশে একটি বড় কর্মী অংশ ছিল তারেক জিয়ার বাহিনী এবং তারেক জিয়ার এই বাহিনীরাই বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তাহলে কি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণ নেই?

বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, কিছুদিন ধরেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে তারেক জিয়ার এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তারেক জিয়া চাচ্ছিলেন সহিংস আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ইত্যাদি। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ অন্যান্য নেতারা বলছিলেন, এরকম আন্দোলন করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের ওপর নাখোশ হবে। এর ফলে বিএনপির জন্য টিকে থাকা কঠিন হবে। কিন্তু তারেক জিয়া তাদের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বরং তারেক জিয়া মনে করছিলেন যে, আন্দোলনের জন্য আর সময় নেই। এখনই যদি সন্ত্রাস, সহিংসতা না করা হয় তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হবে না। আর এই ২৮ অক্টোবরের নাশকতার পুরো মাস্টারমাইন্ড হলেন তারেক জিয়া।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে তারেক জিয়া আলাদাভাবে ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অন্ধকারে রেখে তিনি তাদেরকে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে এবং এই হামলায় পুরোপুরি নেতৃত্ব দিয়েছেন, হামলা পরিচালনা করেছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই। তাদের পরিকল্পনা ছিল আরও ভয়ঙ্কর। তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আগুন দিতে চেয়েছিল। এছাড়াও সচিবালয় এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনাও ছিল বিএনপির ক্যাডারদের। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি অত খারাপ হয়নি। তবে দীর্ঘদিন পর এই নাশকতার কাণ্ড জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

বিএনপির বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন যে তারেক জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান বাস্তবতা অনুধাবন করেন না। বাংলাদেশের মানুষ যে এখন সন্ত্রাস, সহিংসতা ইত্যাদি পছন্দ করেন না এটি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নাই। বরং তারেক জিয়া মনে করছেন যে পুরোনো স্টাইলে আন্দোলন করে সরকারকে কোণঠাসা করা যাবে এবং সরকারকে চাপে ফেলা যাবে। এই কারণেই গতকালকের এই সহিংসতা ঘটেছে। তবে বিএনপির কোন কোন নেতা বলছেন, এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলেরই একটি বহির্প্রকাশ। তারেক জিয়া আতঙ্কিত এই কারণে যে তিনি মনে করছেন যে বিএনপির কিছু কিছু নেতা সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা পশ্চিমাদের পরামর্শে নির্বাচনে যাবে। নির্বাচনে গিয়ে তারা বিএনপিকে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে সংসদে নেবে। এর ফলে তারেক জিয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণ হবে ফুরিয়ে যাবে। এরকম একটি ধারনা ধারণায় তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে আতঙ্ক বোধ করছিলেন। বিশেষ করে তাকে না জানিয়েই বিভিন্ন কূটনীতিকদের সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠক তাকে বিরক্ত করছিল। আর এই কারণেই দলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তিনি তার ক্যাডারদেরকে ব্যবহার করেন এবং গতকালকের যে ঘটনা প্রবাহ তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তারেক জিয়া। বিএনপির অনেক নেতাই এটি জানতেন না এবং তারা প্রথমে মনে করেছিলেন যে নিশ্চিত সরকার করেছে। কিন্তু যখন তারা জানতে পারেন যে তারেক জিয়ার নির্দেশেই এই ধরনের ঘটনা গুলো ঘটিয়েছে তখন আরেকবার তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ বার বার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে তারেক জিয়ার কারণে আন্দোলনের ফসল বিএনপি ঘরে তুলতে পারে না। এবারও তেমন কিছু ঘটবেই বলে তারা মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d