মেঘনায় খসকি জাল নিয়ে দ্বন্দ্ব: আরও একজনের মৃত্যু
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের পশ্চিমে মেঘনা নদীতে অবৈধ খসকি জাল দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট গুলিবিদ্ধ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তিন শ্রমিক আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত ইসমাইল নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চর আলাউদ্দিন গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে।
নিহত অপর দু’জন জেলে হলেন- সুবর্ণচরের পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের পূর্ব চর মজিদ গ্রামের আবদুর রহমান (৩৩) এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে রাজু (১৬)।
নিহত ইসমাইলের মামা রাজা মিয়া জানান, শনিবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পর দুপুরের দিকে ইসমাইলের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সে মারা যায়।
গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সন্দ্বীপের পশ্চিমের ভাসানচরের কাছাকাছি খাসকি জাল দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওইদিন বিকেলে সন্দ্বীপ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও কোস্ট গার্ডের একটি দল ও শ্রমিক নিয়ে নিয়মিত অভিযানে আলাউদ্দিন মাঝির খসকি উচ্ছেদ করতে যায়। তারা অবৈধ খসকি জালের খুঁটি কাটার সময় আলাউদ্দিন মাঝির লোকজন তাদের অভিযানে আসা শ্রমিকদের বাধা দেয়। বাধার মুখে অভিযানের টিম ফিরে আসার পথে ভাটায় টইল বোট আটকে যায়। এর কিছুক্ষণ পর দুটি ট্রলার যোগে লোকজন এসে আলাউদ্দিন মাঝির লোকজনের উপর সশস্ত্র হামলা করে। কোস্ট গার্ড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপরের দিকে ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে হামলাকারীরা পালয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে কোস্ট গার্ড গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৪ জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সন্দ্বীপ নিয়ে আসে। আসার পথে দুইজনের মৃত্যু হয়। আহত অপর দুইজন ইসমাইল এবং নুর হোসেনকে সন্দ্বীপ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সন্দ্বীপ গাছুয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে তাদের সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত শনিবার তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অপর দুইজনকে আলাউদ্দিন মাঝির লোকজন উদ্ধার করে নোয়াখালী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান।
জানা যায়, সুবর্ণচর উপজেলার মাইন উদ্দিন মাঝি ও আলাউদ্দিন প্রকাশ আলি মাঝি সন্দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমে অবৈধ খসকি জাল বসিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে মাছ শিকার আসছে। কিছু দিন আগে থেকে সন্দ্বীপের এক জনপ্রতিনিধির সাথে আঁতাত করে এই খসকি দখলের চেষ্টা চালায় জলদস্যু কেফায়েত বাহিনী। বুধবার সন্ধ্যার দিকে কেফায়েত বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ওই খসকি দখল করতে জাল ও খুঁটি কেটে দেয়। খবর পেয়ে দুটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সেখানে আলাউদ্দিন মাঝির লোকজন ছুটে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে জলদস্যু বাহিনীর গুলিতে ৬ জেলে গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়। এসময় তারা কোস্ট গার্ড ও মৎস্য কর্মকর্তার উপর হামলা চালায়। তখন আত্মরক্ষার্থে কোস্ট গার্ড উপরের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে।