রাঙ্গুনিয়ায় দুই খালে সেতু নেই, একটি গ্রামের মানুষের দুর্গতি
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় দুইটি খালকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামের মানুষ দুর্দশায় পড়েছেন। গ্রামটি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের শিয়ালবুক্কা গ্রাম।
শিয়ালবুক্কা গ্রামটিতে এক হাজার পরিবার বসবাস করেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজনের চলাফেরা আছে গ্রামটিতে। সেখানে তারা গবাদিপশু পালন, বাগান ও চাষাবাদ করেন। সে হিসেবে গ্রামটিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষের যাতায়াত আছে।
শিয়ালবুক্কা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষার্থীদের কেউ দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং কেউ রাজানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে তাদের পার হতে হয় হয় ইছামতী খাল। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে খাল পার হতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে ইছামতীর রাবার ড্যাম বাধ ছেড়ে দেওয়া হলে তাদের পড়তে হয় চরম বিপাকে।
যদিও প্রতিবছর বর্ষায় পারাপারের জন্য একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন স্থানীয়রা। তবে খালে পানি বেশি হলে সেই সাঁকো ভেঙে যায় পানির স্রোতে। আর তখন খাল ভরা পানিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় পারাপার করতে হয় তাদের। অন্যদিকে কোনো গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি ও গর্ভবতী নারী জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা পান না।
আবার ঐ এলাকার অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ হলেও সেখানে যানবাহন না যাওয়ার কারণে কৃষি কাজের আধুনিক কোনো সরঞ্জাম সেখানে নিয়ে যেতে পারেন না তারা। স্থানীয়দের দাবি, ইছামতী খালে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ হোক। যেটা দিয়ে তারা শিয়ালবুক্কা গ্রাম থেকে সহজেই চলাচল করতে পারবেন।
তবে দুই বছর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইছামতী খালের উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেন উপজেলা প্রকৌশলী।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী দিদারুল আলম বলেন, এ বিষয়ে ডিপিপি সাবমিট করা আছে। কিন্তু এখনো পাস হয় নাই। প্রস্তাবনায় অন্যান্য ব্রিজের মধ্যে এটি প্রথমে রেখেছি।
প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, দুই খালকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামের দুর্গতির কথা। আর এই দুই খালের অন্যটি হচ্ছে একই গ্রামের ভেতর অবস্থিত, যেটি শিয়ালবুক্কা খাল নামে পরিচিত। গ্রামটির হাজার হাজার মানুষকে বিভক্ত করে রেখেছে গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এই শিয়ালবুক্কা নামক খালটি।
উপরেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই গ্রামে হাজার পরিবারের বসবাস। আর তাদের মধ্যে অধিকাংশ পরিবার কৃষিকাজ ও গবাদিপশু পালনের উপর নির্ভরশীল। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের বসবাস খালটির উত্তর পাড়ে হলেও প্রায় প্রত্যেকেরই ক্ষেত-খামার রয়েছে দক্ষিণ পাড়ে। তাই প্রতিদিন বেশ কয়েকবার তাদের পায়ে হেঁটে এই শিয়ালবুক্কা খাল পার হতে হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের।
জানা যায়, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো বানালেও বর্ষা এলে তা খালের পানির স্রোতে ভেসে যায়। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও তা অনেকটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আর এটা দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে তারা।
সম্প্রতি গত ১০ জুন এই খাল পায়ে হেঁটে পার হতে গিয়ে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয় নানি-নাতি। আর একদিন পর পাওয়া যায় তাদের মৃতদেহ। মৃত রোকেয়া বেগম (৫০) একই এলাকার বাসিন্দা এবং তার নাতি ইসমাঈল হোসেন (৮) নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর তারা নিজেরাই বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলাচল করেন। গ্রামের প্রত্যেক বাসিন্দাকেই এই খাল পার হতে হয়। তাই এখানে একটি স্থায়ী ছোট ব্রিজ কিংবা কালভার্ট করা গেলে সবার উপকার হতো। খালে শিশুসহ দু’জন মানুষ ভেসে গিয়ে মারা গেছে। একটি ব্রিজ থাকলে হয়ত তাদের এভাবে মরতে হতো না।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফ মেম্বার বলেন, এই শিয়ালবুক্কা খালের দুই পাড়েই বিভিন্ন লোকজনের বসতি। একপাড়ের লোকজনকে অপর পাড়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হতে হচ্ছে। অন্যদিকে সম্প্রতি গ্রামে পাগলা কুকুর বেড়েছে এবং বিভিন্ন সময় গবাদিপশুর উপর আক্রমণ করে চলেছে। রাতেও এই খাল পার হতে হয়। একটি ব্রিজ কিংবা কালভার্ট থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে খাল পারাপার করতে হতো না।
ইছামতী খালের উপর ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে অন্যান্য ইউনিয়নের লোকজনও ক্ষেত খামার করে। তাই বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজনের বসবাস। তাদেরকেও এই ইছামতী খাল পার হয়ে আসতে হয় এবং আমাদেরকেও বাজার সদাই করতে এবং আমাদের এলাকার ছাত্রছাত্রীদের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যেতে এই ইছামতী খাল পার হয়ে যেতে হয়। এলাকার মানুষের দাবি দ্রুত সময়ে এই ইছামতী খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হোক আর সেটি যে স্থান দিয়ে নির্মাণ হলে বেশি লোক উপকৃত হবে সেদিকেই নির্মাণ হোক। এ বিষয়ে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা।
এদিকে শিয়ালবুক্কা খালের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রকৌশী দিদারুল আলম বলেন, এই বিষয়েও আমি অবগত আছি। নতুন প্রকল্প যখন আসবে তখন এই বিষয়েও প্রস্তাব পাঠাব।