রামু সরকারি কলেজের সংকট নিরসনে ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব
কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিশ্চিত করা, শিক্ষক-কর্মচারীর বণ্টন নীতিমালা প্রণয়নসহ অচলাবস্থা নিরসনে ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এসব প্রস্তাবনা দেন।
শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষক ও সুশীল সমাজ।
প্রসঙ্গত, সদ্য অব্যাহতি নেওয়া অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় যেনতেনভাবে চলছিল কলেজটি। ফলে শ্রেণি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধাদান, শিক্ষার্থীদের মারধর, হুমকি ধামকি দেওয়াসহ অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলনের মুখে গত ১৯ আগস্ট পদ থেকে অব্যাহতি নেন অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। এরপর কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেন শিক্ষার্থীরা।
রামু সরকারি কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. রেজাউল করিম সাজিব ও তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করা। ভেঙে পড়া প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে শ্রেণিকক্ষ এবং অফিসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।
এসব কাজ বাস্তবায়নে ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব পেশ করার কথা জানিয়ে তারা জানান, স্যাররা আমাদের প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মতি দিয়েছেন। আশাকরছি, স্থায়ী অধ্যক্ষ না আসা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্যারকে সবাই সহযোগিতা করলে অচিরেই শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
শিক্ষার্থীদের আরও ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব-
-শিক্ষকদের ৯ থেকে ২টা পর্যন্ত কলেজে উপস্থিতি নিশ্চিত করা
-নতুন করে বৈষম্যহীন ক্লাস রুটিন প্রণয়ন ও রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিশ্চিত করা
-শ্রেণি কক্ষকে শিক্ষাবান্ধব করা
– শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের পরিচয়পত্র দেওয়া
-১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথমবর্ষ সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ এবং মানবিক ও ব্যবসায় শাখার ২টি করে সেকশন করার উদ্যোগ গ্রহণ
-অ্যাকাডেমিক লাইব্রেরি দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন
-১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈষম্যহীন বণ্টন নীতি তৈরি – শ্রেণিকক্ষ এবং ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা
-ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং শিক্ষকদের মাঝে কোন্দল নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ
-১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষাবান্ধব সেমিনার কক্ষ তৈরি করা
– অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী শিক্ষক এবং তাঁর সময়ে গত দুই বছরে যারা বিভিন্ন কমিটিতে থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন তাদের আগামী দুই বছর কোনো ধরনের কমিটিতে যুক্ত না করা
– অনার্সে ভাইভা পরীক্ষার ফি ২০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং অনার্সের বিদায় অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা না নেওয়া – পরীক্ষার হলকে নকলমুক্ত রাখা এবং পরীক্ষক নির্বাচন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণ করা
-সদ্য অব্যাহতি নেওয়া অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের অনিয়ম দুর্নীতির অডিট করার জন্য ৬ সদস্যের কমিটি গঠন
-কলেজের পরিত্যক্ত শ্রেণীকক্ষগুলো ব্যবহারের উপযোগী করে কক্ষ সংখ্যা বাড়ানো এবং
-ক্যাম্পাসে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা।
অনার্সের শিক্ষার্থী মোরশেদ কামাল বলেন, রামুর একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রামু সরকারি কলেজ। আমরা চাই কলেজটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। এজন্য একজন দক্ষ অধ্যক্ষ প্রয়োজন। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জোর দাবি একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রফেসর পর্যায়ের কর্মকর্তাকে কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে পদায়ন করা হোক।
কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মো. জুনায়েদুল ইসলাম জানান, কলেজটির সংকট উত্তরণে শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি রামু কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সচেতন মহলকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় আমরা সেই চেষ্টাও করছি। এটা নিশ্চিত আমরা হাল ছেড়ে দেব না।
রামু কলেজ প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের জয়নাল আবেদীন জানান, কলেজের এমন সংকটে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি আশা করছি নতুন প্রজন্মের হাত ধরে আমাদের প্রাণের শিক্ষাঙ্গণ আবার পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। তাদের সব ইতিবাচক কাজের সঙ্গে আমরাও পাশে থাকবো।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের প্রথম সভা-
কলেজটির নানা সংকট উত্তরণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রথম সভায় সভাপতিত্ব করেন রামু সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুপ্রতীম বড়ুয়া।
কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইজত উল্লাহ সঞ্চালায় সভায় শিক্ষকদের মধ্যে কিশোর পাল, ইসরাত জাহান দুলালী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হক, আমম জহির, আকতার জাহান কাকলী, মানসী বড়ুয়া, মনির আহমদ, দিবস বৈদ্য ও মিজানুর রহমান মতামত ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন মো. জুনাইদুল ইসলাম, মোর্শেদ কামাল, রেজাউল করিম সাজিব, মোর্শেদুল হক, মোহাম্মদ এমদাদ তৌহিদুল ইসলাম, মঈনুল হাসান জিহাদ ও শুভ শিকদার প্রমুখ।