রিকশা থেকে নামিয়ে ছুরি দিয়ে তরুণ হত্যা
নগরের ইপিজেডের আকমল আলী রোড এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে মেহেদী হাসান নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও এক তরুণ। তার নাম মো. রিফাত (১৯)।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাত ৮টা ৪৭ মিনিটের দিকে আকমল আলী পকেট গেইটমুখী রেলবিট সংলগ্ন রোডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মেহেদী হাসান ভোলার লালমোহন থানার গোরিন্দা বাজার এলাকার বাসিন্দা। আহত রিফাত ইপিজেড থানার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর সাইডপাড়ার মালুর বাড়ির মো. মিন্টুর ছেলে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক নুরুল আলম আশেক। তিনি বলেন, ‘রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে ইপিজেড থানার আকমল আলী এলাকা থেকে ছুরিকাঘাতে আহত দুজন ভিকটিমকে হাসপাতালে আনা হয়। এদের একজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত অন্যজন হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।’
হাতে আসা একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৮টা ৪৭ মিনিটের দিকে আকমল আলী পকেট গেইট এলাকা থেকে রিকশায় চড়ে মূল সড়কের দিকে যাচ্ছিলেন নিহত মেহেদী ও আহত রিফাত। ঠিক ওই সময় রেলবিট চার রাস্তার মোড়ের আগে মেসার্স আশা মনি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ফটোকপির দোকানের সামনে তাদের রিকশা থামায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
এরপর ওই দুই তরুণকে মারধর করে রিকশা থেকে নামিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে ওরা। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে ছুরি ঘটনাস্থলে ফেলেই দৌঁড়ে পালিয়ে যায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত। আরেকটি নিয়ন্ত্রণ করেন বন্দরটিলার নয়ারহাট এলাকার ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়দানকারী নাঈমুল ইসলাম শুভ। ইয়াছিন আরাফাত স্থানীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফের অনুসারী এবং শুভ ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়দের মতে, নিহত মেহেদী হাসান এবং আহত রিফাত ইয়াছিন আরাফাতের অধীনে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল এবং হামলাকারীরা শুভ গ্রুপের সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার নাম কে বা কারা বলছে, কেন বলছে। আমরা ছাত্ররাজনীতি করি। কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে কী হলো সেগুলো আমরা দেখবো কেন? যারা মেরেছে বা যাদের মারছে তাদেরকে আমি চিনিও না। আমাকে থানা থেকেও ফোন দিয়েছিলো, আমি তাদের বলেছি তদন্ত করে দেখতে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বন্দরটিলার শুভকে আমি চিনি। সে আমার অনেক জুনিয়র। সে স্থানীয় কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের রাজনীতি করে আর আমি করি এমপি এম এ লতিফ সাহেবের গ্রুপ।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিশোর গ্যাং লিডার ইয়াছিন আরাফাত এবং নাঈমুল ইসলাম শুভ দীর্ঘদিন ধরে ইপিজেড এলাকায় জুয়া, মাদক, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে আসছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে চলে নির্যাতন-হামলা।
এদিকে, স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেলেও পুলিশ বলছে, সাদিক ও রমজান নামে দুই যুবক একই পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কারখানার ভেতরে তাদের মধ্যে চলা ঝামেলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা রাত একটার দিকে বলেন, ‘সাদিক ও রমজান নামে দুই যুবক চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের মধ্যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া ছিল। আহত রিফাত তাদের মধ্যস্থতা করে দেয়। কিন্তু সাদিক সেটি মেনে নেয়নি। এজন্যই সাদিক আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে তার নিজের কারখানার আরও লোকজন জোগাড় করে রিফাতকে মারতে যায়।রিফাতকে মারতে গিয়ে মেহেদীর বুকের মাঝখানে ছুরির আঘাত লাগে। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।’
তারা কিশোরগ্যাং গ্রুপের সদস্য কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাদিক এরকম কাউকে নিয়ে আসতে পারে। ঝামেলাটি সম্পূর্ণ সাদিক ও রমজান নামে ওই পোশাকশ্রমিকের মধ্যে। সাদিক মারামারি করার জন্য অতিরিক্ত লোকজন নিয়ে আসতে পারে।’