চট্টগ্রাম

লালখান বাজারে ভবন থেকে পড়ে গৃহবধূ লাশ, পরিবারের দাবি হত্যা

চট্টগ্রামের খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকায় একটি ভবনের চতুর্থতলা থেকে পড়ে তাহমিনা ইকবাল আরশি (৩০) নামে গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, ভবন থেকে ফেলে দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন তারা। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালখান বাজার চাঁনমারি রোডের সিরাজ টাওয়ারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তাহমিনা ইকবাল আরশি নগরের কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন এলাকার ইকবাল উদ্দিনের মেয়ে। তার স্বামীর নাম মো. আকরাম খাঁন। তার স্বামী কুমিল্লার একটি পোশাক কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা। কাজের সুবাদে তারা কুমিল্লাতেই বসবাস করতেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে প্রেমের সম্পর্কে আকরাম খাঁনের সাথে বিয়ে হয় আরশির। তবে, দুজনেই পূর্বে বিবাহিত ছিলেন—যা কেউই জানতো না। সম্প্রতি আকরাম খাঁনের পূর্বের বিয়ের বিষয়ে জানতে পারেন আরশি। এরপরই তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি আরশিকে ডিভোর্সের চিঠি পাঠান আকরাম খাঁন। সেই চিঠি তাঁর হাতে পৌঁছায় ১৪ ফেব্রুয়ারি। যা কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না আরশি। সবশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে উভয় পরিবারের উপস্থিতে বিষয়টি সমাধানে বৈঠকও হয়।

যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আকরামের প্রথম স্ত্রী, আকরাম এবং আরও কয়েকজন। সেখানে আরশি আকরাম খাঁনের পায়ে পড়ে সংসার করার আকুতি জানালেও তা মানেন নি আকরাম। তিনি তার সাথে সংসার করবেন না বলে সাফ জানান। এরপর বৈঠকে কোনো সমাধান না হলে সেখান থেকে আরশি চলে যান আকরামের বাড়ি লালখান বাজার চাঁনমারি রোডের সিরাজ টাওয়ারে। সেখানের ৫ম তলায় গিয়ে তিনি কলিং বেল চাপলে গৃহকর্মী দরজা খোলেননি। আকরাম সেখানে না থাকায় ফোন করেন তাকে। আকরাম কল করে আরশির দুলাভাইকে জানান, ‘আপনার শ্যালিকা পাগলামি করছে, তাকে সামলান।’ এরপরেই ভবনের নিচে আরশির রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে এটি আত্মহত্যা নয়, বরং খুন—এমন দাবি আরশির বাবা ইকবাল উদ্দিনের। তার দাবি বৈঠক নয়, হুমকি দিতে গিয়েছিলেন আকরাম এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে। আজ দুপুরে আমার ঘরে এসে আকরাম এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী আমাকে হুমকি দিয়ে গেছে। আর এর পরেই আমার মেয়েকে ওরা খুন করেছে ভবন থেকে ফেলে দিয়ে। আমি কাল মামলা করবো। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এর বিচার না হলে কাল আমার মতো এমন অনেক মেয়ের প্রাণ যাবে।’

আরশির চাচা মো. নাজিম উদ্দিনকে বলেন, ‘আমার ভাতিজিকে তার স্বামী আকরাম হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই। আমার ভাই শোকে কাতর হয়ে আছে। আমরা এর বিচার চাই।’

তবে, প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলেই এটিকে ধরে নিয়েছে পুলিশ। কিন্তু অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তারা।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নেয়ামত উল্লাহ্ বলেন, ‘আমরা আরশি নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, তিনি ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। লাশটি ময়নাতন্তদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে বাকিটা জানা যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ’পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে বা মামলা করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d