শিশুর হাতে মোবাইল সর্বনাশের শুরু
মোবাইল ফোনের কল্যাণে মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেমন অভাবনীয় বিপ্লব ঘটেছে, ঠিক তেমনি কিছু বিড়ম্বনাও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য স্মার্টফোন বেশ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
মোবাইল ফোন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ শিশু স্কুলে ভর্তির আগেই (প্রি-স্কুল) স্মার্টফোনে আসক্ত, যার মধ্যে ২৯ শতাংশের মারাত্মকভাবে স্মার্টফোনের আসক্তি রয়েছে। বাবা-মা সন্তানদের সময় কম দেওয়ার কারণে ৮৫ শতাংশ শিশু স্মার্টফোন আসক্তিতে ভুগছে। খেলার মাঠের অভাবে ৫২ শতাংশ, খেলার সাথীর অভাবে ৪২ শতাংশ শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত হচ্ছে।
৭৯ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশু কার্টুন দেখার জন্য, ৪৯ শতাংশ গেম খেলার জন্য, ৪৫ শতাংশ শিশু ভিডিও দেখা বা গান শোনার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করে। শুধু ১৪ শতাংশ শিশু পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করে।
গবেষণায় নির্বাচিত ৪০০ শিশুর প্রত্যেকেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। যাদের মধ্যে ৯২ শতাংশ তাদের বাবা-মায়ের স্মার্টফোন ব্যবহার করে ও ৮ শতাংশ শিশুর ব্যবহারের জন্য পৃথক স্মার্টফোন আছে।
বাংলাদেশের শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ সময়ের থেকেও প্রায় তিন গুণ বেশি।
শিশুর মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্বন্ধে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা- জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. আকতারুজ্জামানের কাছে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিশুদের চোখের কী ধরনের ক্ষতি হয় জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের আসক্তির কারণে প্রথমেই তাদের ভিশন সমস্যা হয়। বর্তমান সময়ে অনেক শিশুরই অল্প বয়সে অনেক হাই পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করতে হচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, একদম শুরুতেই শিশুদের দুই, তিন, চার, পাঁচ এমনকি ছয় পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করতে হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইলে আসক্ত হওয়ার ফলে শিশুদের চোখে রেটিনায় দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ক্ষতির পরিমাণ এখন হয়তো বোঝা যাবে না, কিন্তু বাচ্চার বয়স যখন ১০-১২ কিংবা ১৫ বছর বয়স হবে তখন তার চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোন আসক্তির কারণে অনেক শিশুর চোখ টেরা (বাঁকা) হয়ে যায়। বাচ্চাদের যখন পাওয়ার যুক্ত চশমার প্রয়োজন হয় তখন তারা তা ব্যবহার করতে চায় না। আবার শিশুরা ঠিকঠাকভাবে চশমা ব্যবহার না করার ফলে চোখ টেরা বা বাঁকা হয়ে যায়। খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন এখন আমাদের দেশে বাঁকা চোখের শিশু অনেক বেশি, এর অন্যতম প্রধান কারণ মোবাইল আসক্তি।