ষষ্ঠ দফায় আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন
ষষ্ঠ দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সারাদেশে মোট ৩০০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন তিনি।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে জাতীয় ইমাম সম্মেলন থেকে এসব মসজিদের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল বুয়াইজান।
এ ছাড়া অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইমাম ও বিশ্বজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, সারাদেশের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে ৮০ হাজার আলেম-ওলামা যুক্ত। তাদের প্রতিমাসে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী ভাতা দিয়ে থাকে সরকার। এ শিক্ষকরা ইমাম প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারাই মূলত এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এর বাইরেও আরও ২০ হাজার ইমামকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ আয়োজনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের পুরস্কৃত করা হবে।
মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প
নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার।
এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে, ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে, ১৭ এপ্রিল চতুর্থ ধাপে এবং ৩০ জুলাই পঞ্চম পর্যায়ে ৫০টি করে মোট ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণকাজও শেষের দিকে।
সরকারি অর্থায়নে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। শুধু নামাজ আদায় নয়, এসব মসজিদ হবে গবেষণা ইসলামি সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের আলাদা ওজু এবং নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে।
মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
৫৬০টি মডেল মসজিদে সারাদেশে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
লাইব্রেরি সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক একসঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ছয় হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সবসময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।
মসজিদগুলো থেকে প্রতিবছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর এক লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। দুই হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।
৪০ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা ও উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।