চট্টগ্রামবাঁশখালী

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি

বাঁশখালীতে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এক সাংবাদিককে হুমকি প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের নাম এম. বেলাল উদ্দিন। তিনি একুশে পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে ভুক্তভোগী বেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জিডিতে দুইজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন, ছনুয়া ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের স্বাম্বলীপাড়া এলাকার ফরমানের ছেলে মিজানুর রহমান (৩২) ও মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে কামাল উদ্দিন (৩৮)।

জিডির অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হুমকিদাতা কামাল ও মিজান নকল স্বর্ণ ব্যবসায়ী আহমদ কবির ওরফে স্বর্ণ মানিকের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নকল স্বর্ণ ব্যবসা নামক প্রতারণা ও গরু ব্যবসার নামে প্রতারণা করে ধরাকে সরাজ্ঞান করে ফেলেছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি ও প্রতারণার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গরু বিক্রির কথা বলে আগ্রাবাদের দিদারুল আলম নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে ছনুয়ায় এনে মারধর করে। পরে মিথ্যা ডাকাতির স্বীকারোক্তি নিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করে। বিষয়টি নিয়ে একুশে পত্রিকায় ‘গরু বিক্রির নামে সর্বস্ব লুটে নেয় ওরা’ ও ‘বাঁশখালীতে আতংকের নাম মানিক বাহিনী, নিঃস্ব বহু মানুষ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন।

এর জের ধরে গত ২৭ মার্চ বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে অভিযুক্ত কামাল উদ্দিন নিজের নম্বর থেকে কল দিয়ে সাংবাদিক বেলালকে হুমকি প্রদান করেন। এসময় তার পাশে থাকা মিজানকে বেলালের মা-বাবার নাম ধরে অপ্রীতিকর কথা বলতে শোনা যায়।

কামাল উদ্দিন মুঠোফোনে বেলালকে বলেন, “এলাকার ছেলে। সবার সাথে ভালো থাকার চেষ্টা করবি। তোর সাথে আজকেই দেখা করতে চাই।” কামাল উদ্দিন ফোন করার ৫ মিনিট পর মিজানুর রহমান নিজের নম্বর থেকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় তিনি বলেন, “তুই যে দেশের বক, আমি সে দেশের পুঁটিমাছ। আমি মিজান বলতেছি। নিউজ কর, আর রেকর্ড কর। সাংবাদিক বড় হয়ে গেছিস। অসুবিধা নাই। তুই ছনুয়ার ছেলে, এটা খেয়াল রাখবি। আমরাও ছনুয়ার ছেলে। ..তোকে আমি কয়টা মারি দেখ। তোর মতো এরকম সাংবাদিক তোর মায়ের…. ভরে দেব। তুই রেকর্ড কর। তুই জানতে পারবি, আজকে রাতের মধ্যে তোর মাকে ধর্ষণ করবো।”—এই বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করে।

একই দিন রাত আনুমানিক ১১টা ৩৩ মিনিটে সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের বাড়িতে যান কামাল ও মিজান। এসময় দু’জন বলেন, “তোর ছেলে আমাদের বিরুদ্ধে নিউজ করে দেশ কানা করতেছে। এলাকার ছেলে হিসেবে সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে বলবি। না হয় তোদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেব।”

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কামাল ও মিজানের বৈধ কোনো পেশা নেই। মূলত নকল স্বর্ণ ব্যবসা নামক প্রতারণা ও গরু বিক্রির নামে লোকজন এলাকায় এনে মারধর করে। পরে অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে ছবি তুলে মিথ্যা ডাকাতির স্বীকারোক্তি আদায় করে সন্ত্রাসীরা। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে পারে না। আমি এসব তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। একই সাথে আমার বাড়ি গিয়ে আমার মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এমতাবস্থায় আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘প্রতারক চক্রের মূলহোতা আহমদ কবির মানিককে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই চক্রের বাকি সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিককে হুমকির বিষয়টি দুঃখজনক। ওই সাংবাদিক জিডি করেছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d