সড়কে অবরোধ যাত্রীদের ভোগান্তি, উঠানামা ১০, ডাইরেক্ট ৩০
আজ মঙ্গলবার স্বাভাবিকের তুলনায় সড়কে গাড়ি কম থাকায় গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়েছে নগরের অফিসগামী মানুষের।জীবিকার প্রয়োজনে কর্মক্ষেত্রে যাওয়াটাও কঠিন।সড়কে বাড়তি ভাড়া এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। দুমুঠো জীবিকার খোঁজে বাইরে গেলেও পড়তে হয় অবরোধের আজাবে।
সকাল পেরিয়ে দুপুর ২টা গড়ালেও সড়কে গাড়ির সংখ্যা বাড়েনি।সকাল পেরিয়ে দুপুর ২টা গড়ালেও সড়কে গাড়ির সংখ্যা বাড়েনি।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) কালুরঘাট, রাস্তারমাথা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড় থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম নগরের বেশিরভাগ স্থানে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতেগোণা। প্রতি মোড়ে মোড়ে অপেক্ষায় ছিলেন কর্মস্থলে ছোটার তাড়ায় থাকা যাত্রীদের প্রতীক্ষা। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেয় সড়কে থাকা গণপরিবহনগুলো।
রাস্তারমাথা থেকে মিনিবাসে (১ নম্বর) করে জিইসি আসেন মোহাম্মদ হাসান। যদিও পুরোটা পথ এসেছেন দাঁড়িয়ে। তাও তাকে গুণতে হল বাড়তি ভাড়া। তিনি বলেন, ‘মিনিবাসের সংখ্যা কম ছিল। তাই বাড়তি ভাড়া চেয়েছেন হেলপাররা।’দুপুর দুইটায় নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় কোনি গণপরিবহণ দেখা যায়নি। প্রাইভট কার ও সিএনজি অটোরিকশা চলতে দেখা যায়।
কত টাকা বাড়তি, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘যেখানে প্রতিদিন রাস্তার মাথা থেকে জিইসি এলে ভাড়া দিত হতো মাত্র ৯/১০ টাকা। সেখানে আজ তারা নিয়েছে ২০ টাকা। গাড়িতে উঠার সময় হেল্পার জানিয়েই দিয়েছে— উঠানামা ১০ টাকা, ডাইরেক্ট ৩০ টাকা’, যোগ করেন হাসান।
শুধু মোহাম্মদ হাসান নন; সড়কে যাতায়াত করা অফিসগামী থেকে শুরু করে সকল যাত্রীই পড়েছেন বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তিতে।
রুট অনুসারে, কালুরঘাট থেকে ছাড়া ১ নম্বর (মিনিবাস) গাড়িগুলো যায় নিউমার্কেট পর্যন্ত। আর সেই হিসেবে তারা আজকের অবরোধকে কেন্দ্র করে অন্যান্যদিনের চেয়ে বাড়তি ভাড়া হেঁকেছেন। যেখানে ভাড়া ৫ টাকা, যাত্রীদের গুণতে হয়েছে ১০ টাকা, ৭ টাকার ভাড়ায় ১৫ টাকা আর ১২/১৫ টাকার ভাড়ায় গুনতে হয়েছে ৩০ টাকা।
জিইসি মোড় আসা ১ নম্বর (মিনিবাস) গাড়ির এক হেল্পারকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রিস্ক নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। গতকাল রাতেও এক মিনিবাস পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। আজকে আমাদের সিরিয়ালের অনেক গাড়ি বন্ধ আছে। আমরা বের করেছি যাত্রীদের কথা চিন্তা করে। সেই হিসেবে আমরা কিছু টাকা বাড়তি নিচ্ছি।’
এদিকে, বাস-মিনিবাসের সংখ্যা কম থাকায় অনেককে রিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে গিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) স্পিনা রানী প্রামাণিক সিভয়েস প্রতিবেদককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। টহল পুলিশের বাড়ানোর পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা কাজ করছেন। জনগনের চলাচলে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সহ্য করা হবে না, পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা এই হরতাল অবরোধ মানি না। আমাদের বাস স্বাভাবিক সময়ের মত চলছে। চট্টগ্রাম শহরে নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। আর যেসব এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর বা আগুন দেয়া হবে, সেই এলাকায় যারা বিএনপি-জামায়াত করে তাদের এর দায়ি-দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিব।’
গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, ‘আমরা সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। আমরা মামলা করব।’
বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে গাড়ির চালক-হেল্পার জনগণকে কষ্ট দিকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।’ তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন অভিযোগ পাননি বলেও জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন।
উল্লেখ্য, বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধে গতকাল সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাত থেকে চট্টগ্রাম নগরে তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সবশেষ আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে নগরের ইপিজেড থানার সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় একটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এর আগে, সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় একটি মিনিবাসে এবং রাত সোয়া ৩টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ট্যানারি বটতলে একটি সিটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।