‘সমঝোতা’ চান হকার নেতারা, চসিকের ‘না’
নগরের নিউমার্কেট-স্টেশন রোড এলাকায় উচ্ছেদ, সংঘর্ষ, মামলা— তিন ধকলের পরও ফুটপাতে ‘রুটি-রুজির’ স্থান ধরে রাখার বিষয়ে অনড় হকার নেতারা। প্রয়োজনে যেকোনো সংস্থার যৌক্তিক পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করতে চান তাঁরা। এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক টেবিলেও বসতে পিছপা হবেন না। ‘সমঝোতা’ চান হকার নেতারা, চসিকের ‘না’
তবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) বলছে, আপোষের কোনো সুযোগ নেই। তারা রাষ্ট্রীয়কাজে বাধা দিয়ে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছে। নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত এখন থেকে হকারমুক্ত। তবে ফুটপাতে নয়, হকার পুর্নবাসন হবে নাইট মার্কেটে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসার জন্য বসতে না দেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘চসিকের ক্ষমতা আছে। ক্ষমতার দাম্ভিকতায় মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়। হকার তো মানুষ না! এ দেশের নাগরিকও না! সারা চট্টগ্রামে আমাদের হকার আছে প্রায় ৩০ হাজার। আর যেখানে উচ্ছেদ করেছে সেখানে আছে প্রায় ৫ হাজার। এই ৫ হাজার মানুষের ওপর তাদের পরিবার নির্ভরশীল। সামনে রোজা এরপর ঈদ। এই ৫ হাজার মানুষের কী হবে?’
‘আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই—সিটি করপোরেশনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ আছে। আমরা এ দেশের নাগরিক। যেহেতু আমাদের রুজি-রুটির বিকল্প কোনো সংস্থান নেই, তাই পূর্বের মেয়ররা ফুটপাতে হকারদের ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র মহোদয় যেভাবে বলেছিলেন ওনার নির্বাচনের আগে, তিনি যেন সেই কথা রাখেন। তিনি বলেছিলেন, হকারদের পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হবে না। কিন্তু উনি ওনার অবস্থান থেকে সরে গেলেও আশা করছি এ বিষয় নিয়ে আমাদেরকে যদি সিটি করপোরেশন, পুলিশ কমিশনার বা সরকারি যেকোনো সংস্থা থেকে আদেশ করে বা মিটিংয়ে ডাকে তাহলে আমরা অবশ্যই যাব। আমরা সবসময় আলোচনায় বিশ্বাসী। আমাদের আন্দোলন ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে নয়। পেটের জন্যেই আমাদের এ আন্দোলন।’ – যোগ করেন এই হকার নেতা।
আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আলাপে বসার সু্যোগ এখনো দেখছেন কিনা?—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো আমরা আশাবাদী। আমাদের বৈঠকের জন্য আহ্বান করলে আমরা যাব। আর আহ্বানের মধ্যে আবারও ফুটপাতে বসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে যদি আমাদেরকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয় তা যৌক্তিক হলে সেটিও আমরা মেনেও নিব। তবু আমরা ফুটপাতে উঠতে চাই।’
তবে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটপাতে কারো বসতে চাওয়াটা বৈধ নয়। যেহেতু তারা রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা প্রদান করেছেন এবং চসিকের সম্পত্তি নষ্ট করেছেন সেহেতু এক্ষেত্রে আপোষ করার কোনো সুযোগ নেই।’
‘আর এদের পুনর্বাসনের একটা বিষয় তো থাকেই। মেয়র মহোদয়ও প্রায়ই এ কথা বলেন। আমরা এগুলো বিবেচনা করছি— নাইট মার্কেট কোথায় করা যায়। কিন্তু ফুটপাতে বসতে চাওয়াটা কোনোভাবেই বিবেচনায় নেওয়া হবে না। এমনকি ভবিষ্যতেও ফুটপাত কাউকেই দখল করতে দেওয়া হবে না। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।’- যোগ করেন চসিকের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমাবেশ-মিছিল করা সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তারা (হকার) যেটি করেছে লিমিটেশনের বাইরে চলে গেছে। তারা আরেকজনকে শারীরিকভাবে ক্ষতি বা সম্পত্তিতো নষ্ট করতে পারে না। জনসাধারণের চলাচল তারা বন্ধ করতে পারে না। তারা আমাদের গাড়িও ভাঙচুর করেছে। এগুলো আপোষযোগ্য কিছু না। আর এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে না, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। সুতরাং এটার পরিণতি তাদেরকে মেনে নিতে হবে।’
এদিকে, চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে নিউমার্কেট এলাকার আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা কাজ করছে। মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি নিউমার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকার সড়ক-ফুটপাত হকারমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। উচ্ছেদের মাধ্যমে খালি হওয়া ফুটপাত-রাস্তায় যাতে অবৈধ হকাররা আর কোনো দোকান বা স্থাপনা বসাতে না পারে সেজন্য সোমবার তদারকিতে যান চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা, শাহরিন ফেরদৌসী, মো. সাব্বির রহমান সানি এবং রেজাউল করিম। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে নতুন রেল স্টেশন এলাকার পাবলিক টয়লেটের সামনে রাস্তার ওপর বসানো জেনারেটর পাম্প উচ্ছেদ শেষে নিউমার্কেটের দিকে অগ্রসর হলে হকাররা জোটবেঁধে হামলা চালান ম্যাজিস্ট্রেট ও চসিক কর্মকর্তাদের ওপর।
একপর্যায়ে পুলিশ তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও পুলিশকে লক্ষ্য করে হকাররা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে পুলিশ, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, হকারসহ মোট ১৪ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১০টি গাড়ি। ঘটনার সময় হকারদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
ঘটনার পরপরই মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে নগরের কোতোয়ালী থানায় চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু, সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম, মেট্রোপলিটন হকার্স সমিতির সভাপতি মিরন হোসেন , সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ভূঁইয়া সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শাহীন আহমদ, সদস্য নূর মোহাম্মদ, চট্টগ্রাম হকার্স লীগের সাবেক সভাপতি ঋষি বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ রনি, চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারেক হায়দার এবং সোহেলসহ অজ্ঞাত ১২শ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা হয়।