অন্যান্য

সাইবার আইনে ঢাকায় এক মাসে ১৪ মামলা

নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর প্রথম মাসে ঢাকায় মামলা হয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের ১২টি এবং থানায় হয়েছে ২টি মামলা। বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে মানহানিসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে। এর বাইরে চারটি মামলা হয়েছে প্রতারণা ও হ্যাকিং-সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনায়।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হয়।

নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলাগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগে মামলাগুলো করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনেও (আইসিটি) মানহানিসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে বেশি। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও এ-সংক্রান্ত মামলা ছিল। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনেও দেখা যাচ্ছে মানহানিকর তথ্য কিংবা বক্তব্য প্রকাশের অভিযোগে মামলা হচ্ছে বেশি।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের গেজেট প্রকাশের সাত দিনের মাথায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা করেন কেরানীগঞ্জের এক নারী। তাঁর অভিযোগ, ফটোশপের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের এক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে তাঁর ছবি জুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করে তাঁর সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে যে ১২টি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে ৬টির বাদী নারী।

এর আগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনেও (আইসিটি) মানহানিসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে বেশি। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও এ-সংক্রান্ত মামলা ছিল। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনেও দেখা যাচ্ছে মানহানিকর তথ্য কিংবা বক্তব্য প্রকাশের অভিযোগে মামলা হচ্ছে বেশি।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম

থানায় যে দুটি মামলা হয়েছে, তার একটির বাদী জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক কাজী শামীম উজ্জামান। নিটোরের সেন্ট্রাল হিউম্যান রিসোর্স ইনফরমেশন সিস্টেম (এইচআইআরএস) সফটওয়্যারে হ্যাকিংয়ের অভিযোগে তিনি ৮ অক্টোবর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেন।

মামলার বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করবে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ১০ অক্টোবর সাইবার নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে। এজাহারের ভাষ্য অনুযায়ী, অজ্ঞাতনামা আসামিরা গত ৩১ আগস্ট ভুক্তভোগী এক নারীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেন। হ্যাক হওয়া আইডি ফেরত পেতে ওই নারী প্রতারক চক্রের সদস্যদের ৫০ হাজার টাকাও পাঠান। মামলার আলামত হিসেবে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথিত হ্যাকারদের খুদে বার্তা জমা দিয়েছেন বাদী। তবে এখন পর্যন্ত আসামিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীর ফেসবুক আইডি হ্যাকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।

নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলাগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগে মামলাগুলো করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করা ফৌজদারি অপরাধ। এমন অপরাধের শিকার কোনো ব্যক্তি যদি এই আইনে মামলা করে থাকেন, সেটি তাঁর আইনি অধিকার।

নিবর্তনমূলক কিছু ধারা ও এর অপব্যবহারের কারণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে নতুন আইন করে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত কিছু ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনেও রাখা হয়েছে। এ নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। আইনজীবী জেড আই খান পান্নার মতে, ‘মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে যেসব ধারা সাংঘর্ষিক, সেগুলো বাতিল করা উচিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d